সফল বাংলাদেশ

সফল বাংলাদেশ: সব সফলতার খবর আলোচনা হোক গর্বের সাথে

৫ম বারের মতো বোরোর বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে শঙ্কিত কৃষক

 

২৯ এপ্রিল ২০১২

কাওসার রহমান ॥ টানা পঞ্চমবারের মতো দেশে বোরোর বাম্পার ফলনের রেকর্ড সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় চলতি বছরও দেশে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এ বাম্পার ফলনের পর কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ধানের মূল্য নিয়ে। বোরো ধান কাটা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নতুন ধানের বাজারে ধস নামার। ইতোমধ্যে নতুন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ধানের দাম আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ফলে কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। অথচ সার, বিদ্যুত, ডিজেল ও কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ বছর বোরো উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকার ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসছে না। বরং বিপুল মজুদ নিয়ে সরকারও এবার বোরো ধান-চাল ক্রয়ের ব্যাপারে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। গত দুই বছর আগে ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করা হলেও এবার এখন পর্যন্ত বোরো ধান- চাল সংগ্রহের মূল্য ঘোষণা করা হয়নি। ফলে নতুন ধানের বাজার নৈরাশ্যজনক অবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। এ সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা নতুন ধানের বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারাই এখন বোরো ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ অবস্থায় সরকার ধানের বাজারে হস্তক্ষেন না করলে কৃষক ধান আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সারাদেশে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। দেশের হাওড় অঞ্চলে এখন পুরোদমে ধান কাটা চলছে। অন্যান্য অঞ্চলেও আগাম বোরো ধান কাটা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ৩০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। কৃষক নগদ টাকার জন্য বাজারে নতুন ধান নিয়ে গিয়ে বিপাকে পড়ছে। নতুন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ধানের বাজারও পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ভিজা ধান প্রতিমণ ৪৫০ থেকে ৫শ’ টাকায় নেমে এসেছে। হাওড় অঞ্চলে নতুন ভিজা ধানের দাম ৪শ’ টাকায় চলে এসেছে। ফলে কৃষকের মধ্যে দারুণ হাতাশা দেখা দিয়েছে।

এবার নিয়ে টানা পাঁচ বছর দেশে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, বড় ধরনের কোন প্রাকৃতি দুর্যোগ না হওয়ায় এ বছর বোরোর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ধানের যে ফলন দেখা যাচ্ছে তাতে বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত ধানের ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এতে এ বছর বোরোর উৎপাদন এক কোটি ৯০ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 
জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের দক্ষতার কারণে গত পাঁচ বছর ধরেই দেশে বোরোর বাম্পার ফলন সম্ভব হয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে বোরোর এ বাম্পার ফলন শুরু হয়েছে। ওই বছর চাল আকারে বোরোর উৎপাদন আগের বছরের এক কোটি ৫০ লাখ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এক কোটি ৭৭ লাখ ৬২ হাজার টনে দাঁড়ায়। পরের বছর ২০০৮-০৯ সালে বোরো উৎপাদন হয় এক কোটি ৭৮ লাখ নয় হাজার টন। পরবর্তীতে নন-ইউরিয়া সারের মূল্য হ্রাস করার কারণে কৃষক তার জমিতে সুষম সার প্রয়োগের সুযোগ পায়। সেই সঙ্গে অন্যতম কৃষি উপকরণ সার কৃষকের দোরগোড়ায় চলে যাওয়ায় বোরো উৎপাদনে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে ২০০৯-১০ সালে বোরো উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় এক কোটি ৮৩ লাখ ৪১ হাজার টন। পরের বছর ২০১০-১১ সালে বোরো উৎপাদন আরও বেড়ে এক কোটি ৮৭ লাখ টন হয়। ধারাবাহিকভাবে টানা পাঁচ বছর বোরোর এ বাম্পার ফলন দেশে কৃষি খাতের ইতিহাসে একটি অনন্য রেকর্ড, যার কৃতিত্ব এ দেশের কৃষকদের। 
কিন্তু এ বাম্পার ফলন নিয়েও কৃষক খুশি হতে পারছে না। বাজারে ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় নতুন ধান নিয়ে কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ইউরিয়া সার, ডিজেল, বিদ্যুত ও কৃষি মজুরের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর বোরো উৎপাদনের খরচ কমপক্ষে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর যেখানে এক কেজি ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৫ টাকা ৪৭ পয়সা, এ বছর সেখানে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ১৩ পয়সা। 
গত বছর নতুন ধান ওঠার পর ধানের দাম যেখানে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকার মধ্যে ছিল। এ বছর তা ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ১৭-১৮ টাকা উৎপাদন খরচের বিপরীতে কৃষক এবার ধানের দাম পাচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা। নগদ টাকার সঙ্কটের কারণে এ দামেই কৃষকরা বাধ্য হচ্ছেন ফড়িয়াদের কাছে ধান বেচতে। 
নতুন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ধানের দাম কমে যাওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে বোরো ধান কাটা পুরোদমে শুরু হলে এ দাম আরও কমে যাবে। ফলে কৃষক তার ধান নিয়ে বিপাকে পড়বে। বিশেষ করে সবচেয়ে বিপদে পড়বে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা। কারণ নগদ টাকার সঙ্কটের কারণে তাদেরই নতুন ধান নিয়ে এখন বাজারে দৌড়াতে হচ্ছে। 
নতুন ধানের বাজারে এ নৈরাশ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি হলেও সরকার এখন পর্যন্ত ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করেনি। বিপুল পরিমাণ মজুদের কারণে সরকার এবার ধান-চাল সংগ্রহে ধীরগতিতে এগুচ্ছে, যা বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে সরকারের কাছে প্রায় ১৩ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে ১১ লাখ টনই চাল। এ মজুদ নিয়ে সরকার এবার কতটা ধান-চাল কিনতে পারবে সেটা নিয়েও সরকার চিন্তায় আছে। কারণ সরকারী খাদ্য গুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন। 
এ অবস্থায় খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক একটি চ্যানেলকে জানিয়েছেন, এ বছর দেশে প্রায় দুই কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দশ লাখ টন চাল কিনে কতটা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কৃষক এবার বোরো ধানের ভাল দাম পাবে কিনা এ নিয়ে সরকারও উদ্বিগ্ন। কারণ সরকার চাইলেও বোরো ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তবে এ বিষয়ে সরকার কি করতে পারে তা নির্ধারণে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হবে। 
তিনি বলেন, ‘সরকার ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতোমধ্যে দেশে চাল আমদানি বন্ধের চিন্তাভাবনা করছে। সেই সঙ্গে সরু চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রেকর্ড

NewImage

সুত্র

৮০ দিনে প্রতি হেক্টর উৎপাদন ১০ টন

নজমূল হক সরকার : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর এ কৃতিত্ব মুক্তাগাছা কাশিমপুর বিএডিসি’র খামারের। প্রতি হেক্টরে ১০ টন ধান উৎপাদনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বছরে ৪ বার এমন ধান উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে কৃষি গবেষণায় নিয়োজিত বিজ্ঞানীরা জানান। বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. এস এম নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশকে খাদ্যে আÍনির্ভরশীল হতে হলে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ধান চাষের বিকল্প নেই। সারাদেশে এ ধরনের ধান উৎপাদনের কৃষকদের উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ধান উৎপাদনে খরচ কম হবে। কৃষকরাও অধিক মুনাফা পাবে।চলতি বছরের গত ২০ ফেব্র“য়ারিতে সর্বাধুনিক প্রক্রিয়ায় অটোমেটেড নার্সারিতে উৎপাদিত চারা রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে রোপণ করা হয়। চারা রোপণের মাত্র ৮০ দিনে এই ধান কর্তন করা হয়। এ বিষয়ে বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. এস এম নাজমুল ইসলাম বলেন, এই সর্বোচ্চ রেকর্ড উৎপাদনের মূল ভূমিকা পালন করেন গোল্ডেন ব্রান ইঙ্ক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহদাব আকবর। আলাপকালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহদাব আকবর বলেন, এই আধুনিক প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ ও নুতন বিভিন্ন জাতের ধান প্রাšি-ক কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়াই তার জীবনের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন- সরকার, এনজিও, ফাও- এর সমন্বিত সহযোগিতা পেলে মাত্র ৩ বছরের মধ্যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বা¯-বায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণকরণ ও অন্যতম খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। তিনি বলেন, এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে গ্রাম পর্যায়ে যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্ত বলায় গড়ে তোলা হবে। উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত ধান সরাসরি বাজারজাত করার মাধ্যমে ধানের সর্বোচ্চ মূল্য নিশ্চিত করার মহাপরিকল্পনা নিয়ে শাহদাব আকবর কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত ও আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কোনও বিকল্প নেই।

 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

টাঙ্গাইলের পোল্ট্রি খামারিদের দিন বদল

NewImage

সুত্র
টাঙ্গাইল দেলদুয়ারের সফল পোল্ট্রি চাষী শাহজাহান মিয়া
এক সময় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে বেকার যুবক/যুবতীরা দেলদুয়ারে পোল্ট্রি খামার করেন। তাদের উৎসাহ ও লাভ দেখে অনেক সাধারণ মানুষও পোল্টি খামার গড়ে তোলেন। কিন্তু হঠাৎ বার্ড-ফ্লু, একদিনের বাচ্চার অস্বাভাবিক দাম, খাদ্য, ওষুধপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদির দাম বৃদ্ধি এবং ডিম ও মুরগির দাম কমে যাওয়ায় একের পর এক বন্ধ হয়ে যায় সবগুলো খামার। পোল্টি শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই অন্য পেশায় চলে যান। ৫/৭ বছর আগে দেলদুয়ারে প্রায় সহস্রাধিক ব্রয়লার ও লেয়ার খামার ছিল। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে বর্তমানে প্রায় ৩০০ ব্রয়লার ও লেয়ার খামার আছে। আগে যেখানে একদিনের বাচ্চার দাম ছিল ৬০/৭০ টাকা, বর্তমানে একদিনের বাচ্চার দাম ১৮ থেকে ২২ টাকা। আগে ১ হালি ডিমের দাম ছিল ১৬ থেকে ২০ টাকা, বর্তমানে ১ হালি ডিমের দাম ৩০ থেকে ৩২ টাকা। আগে ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকা, বর্তমানে ১ কেজি মুরগির দাম ১৬০ টাকা। খাবার ও ওষুধের দাম কিছুটা বেড়েছে। তার পরও প্রতিটি খামার এখন লাভজনক অবস্থায় আছে। বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পের লাভজনক অবস্থা দেখে অনেক খামারি তাদের বন্ধ হয়ে যাওয়া খামার আবার চালু করেছেন। সরজমিন দেলদুয়ার সদরের শাহজাহান মিয়ার খামার ও বর্ণী গ্রামের শাহআলম মিয়া, আশোক আলী, সোহেল মিয়া, কালাম মিয়া, রাসেল মিয়া, সুলায়মান মিয়া ও করিম মিয়ার পোল্টি খামার পরিদর্শন করে এবং তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাচ্চার দাম কম, ডিমের দাম বেশি হওয়ায় তারা ক্ষতি পুঁষিয়ে লাভজনক অবস্থায় রয়েছেন। দেলদুয়ার সদরে শাহজাহান মিয়ার খামারে প্রায় ৩ সহস্রাধিক লেয়ার মুরগি রয়েছে। বর্ণী গ্রামের শাহআলম মিয়া জানান, তার খামারে ১ হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে। মুরগিগুলোর বয়স ৭ মাস। একদিনের বাচ্চা তিনি ২২ টাকা দরে কিনেছেন। বাচ্চা বড় হয়ে ৫ মাস বয়স থেকেই ডিম দেয়া শুরু করে। একটানা ১৮ মাস পর্যন্ত ডিম দেয়। শাহ আলম মিয়া প্রতিদিন প্রায় ৯৫০টি ডিম পাচ্ছেন। মহাজনরা বাড়ী থেকেই ডিম কিনে নিয়ে যায়। প্রতি হালি ডিম তিনি পাইকারি ৩২ টাকায় বিক্রি করছেন। তার দেখাদেখি আশপাশের প্রায় ১০/১৫টি খামার গড়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হেলাল আহমেদ বলেন, দেলদুয়ারে ব্রয়লার এবং লেয়ার মিলে প্রায় ৩০০ খামার রয়েছে। বার্ড-ফ্লু না থাকায় এবং প্রানিসম্পদ বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়ায় পোল্টি খামার দিন দিন বেড়েই চলছে। য় দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

সবজি চাষে স্বাবলম্বী সুনামগঞ্জের ভাটির মানুষ

NewImage

শিল্প-বাণিজ্য ডেস্ক

ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দরিদ্র ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীরা মাঠে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে এখন ব্যস্ত। হাওরের যেসব জমিতে তারা চাষাবাদ করছে এক সময় সেসব জমি পতিত ছিল। গ্রামের শত শত নারী অলস সময় কাটাতেন। ঘরবাড়ির কাজ ছাড়া যেন তাদের কোনো কাজই ছিল না। ফলে স্বামীর একার উপার্জনে সংসার চালাতে কষ্ট হতো। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে গেছে। গ্রামের অনেক নারী ওই জমিতে বিভিন্নমুখী চাষাবাদে কাজে সম্পৃক্ত হয়ে বাড়তি আয় করছেন। এতে তাদের সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এসেছে। বাসস।
ধাপকাই গ্রামের আছমা জানান, গত ৫ বছর আগে একই জেলার তাহিরপুর উপজেলার কাঞ্চনপুরের বাচ্ছু মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়। প্রথম দিকে স্বামী তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। কিছুদিন পর স্বামী আরেকটি বিয়ে করে এবং তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে গত ২ বছর আগে সামাজিকভাবে বিয়ে ভেঙে যায় এবং তার মা-বাবা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। আছমা বাবার সংসারে থাকলেও পরিবারের বোঝা হতে চাননি। তিনি ২০০৯ সাল থেকে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক এনজিও সংস্থা হেলভেটাস সুইস ইন্টার কো-অপারেশনের সদস্য হয়ে ভিটাবাড়ি ও পতিত জমিতে সবজি চাষ করে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন। ইতিমধ্যে তার মোটামুটি আয়ও হয়েছে।
৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া আছমা আরো জানান, তারা ২ ভাই ও ৩ বোন, তিনি চতুর্থ। বাবার ভিটাবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। বর্তমানে আছমা পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও ৫টি হাঁস, ১৪টি মুরগি ক্রয় ও ১ কেয়ার বোরো জমি লিজ নিয়েছে।
হেলভেটাস সুইস ইন্টার কো-অপারেশনের ফিল্ড ফেসিলেটর হাজেরা খাতুন (হ্যাপি) জানান, ধাপকাই গ্রামে আছমার মতো এ রকম ৩৪টি পরিবারকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দল গঠন করে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ সরকার যৌথভাবে। ফিল্ড টিম লিডার মাসুদ রানা জানান, মহিলারা কাজকর্মে খুবই আন্তরিক। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা ফিরে আসছে। 
এক সময় দিরাই বাজারে সবজি আসত সিলেট কিংবা অন্য স্থান থেকে। এখন এলাকার মহিলাদের উৎপাদিত সবজিই স্থানীয় বাজারে পাওয়া যায়। এমনকি অন্য এলাকায়ও তাদের উৎপাদিত সবজি পাইকাররা নিয়ে যায়। 
হেলভেটাস সুইস ইন্টার কো-অপারেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক জাহিদ হাসান বলেন, ‘দুস্থ মহিলাদের কর্মজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে ৬২টি দলকে তারা ২০০৯ সাল থেকে সহযোগিতা করছে। দিরাই-শাল্লা উপজেলার মোট সদস্য পরিবার সংখ্যা ১ হাজার।
গত বছর তারা লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, বাঙ্গি, ক্ষিরা, মরিচ, টমেটো, মুলা, ধনিয়া করেছিলেন। এগুলো ছাড়া এ বছর ভুট্টা, আলু, মিষ্টি আলু লাগান। প্রথম বছরের আয় থেকে দলের প্রত্যেক সদস্য পতিত জমিতে সবজি চাষ করে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, বোরো জমিতে আগাম জাতের ধান লাগিয়ে ২ মণ করে ধান, বাড়িতে সবজি চাষে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে পান। 
রফিনগর ইউনিয়নের সেচনী গ্রামের বেগম বিবির ৪ ছেলে, ২ মেয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। বিয়ের পর দেখেন উভয় পরিবারে একই চিত্র, দারিদ্র্য আর অভাব। স্বামী রোজ শ্রমিক হওয়ায় সংসার ঠিকমতো চলতো না, অভাবের কারণে ছেলে কিছু লেখাপড়া করার পর আর এগোতে পারেনি। তবে মেয়েটি লেখাপড়া করছে। বেগম বিবি জানান, ধাপকাই গ্রামে যখন ২০০৯ সালে ইন্টার কো-অপারেশনের সদস্য বানানো হচ্ছে, আমাকেও তাদের দলে নেওয়া হয়। সেই থেকে তাদের তত্ত্বাবধানে আন্তরিকভাবে কাজ করছি। এ কাজ করে আমার এবং গ্রামের অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। গ্রামে ক্রমেই দারিদ্র্য কমে আসছে।
ধাপকাই গ্রামের সাদেক মিয়ার (৪৫) স্ত্রী নাছিমা বেগম। ১৮ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। অভাবের সংসার একে একে কোলজুড়ে আসে ১ ছেলে ও ৪ মেয়ে। নাছিমা বলেন, লেখাপড়া না করায় অন্ধের মতো আছি। সন্তানদের সেই অন্ধকারে রাখতে চাই না। এক সময় সংসারে অভাব থাকায় মাটি কাটার শ্রমিকের কাজ করেছি। এখন আর তা করতে পারি না। অভাবের সঙ্গে সংগ্রাম করেছি, কিন্তু অভাব দূর হয়নি। অবশেষে ২০০৯ সালে হেলভেটাস সুইস ইন্টার কো-অপারেশন আমার মতো ৩৪টি পরিবারকে নিয়ে উদ্দীপনা দল গঠন করে দেয়। তাদের দেওয়া পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে এখন অর্থনৈতিক দিক থেকে আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি।
এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মহব্বত আলী জানান, এলাকার স্বামী পরিত্যক্তা ও অভাবী নারীরা বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে, এটা খুবই আশাব্যঞ্জক।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

সামুদ্রিক শৈবালের গুণ:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ এর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাফরের গবেষণা

NewImage

চবি: ‘সামুদ্রিক শৈবাল’ বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ সম্পদ হিসেবে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে মানুষের ভক্ষণযোগ্য ও শিল্পের কাচাঁমাল ছাড়াও রপ্তানি পণ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে এ জলজ উদ্ভিদ।  
এটি উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং ঔষুধি ও শিল্পের কাঁচামালে সমৃদ্ধ প্রজাতি। এর ক্যরাজিনান নামক পদার্থ মানবদেহে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। এমনকি ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়।
সামুদ্রিক শৈবালের এমনসব গুণসহ নানা তথ্য উঠে এসেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ এর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাফর পরিচালিত এক গবেষণায়।  
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে সেন্টমার্টিনস দ্বীপে ১৪০ প্রজাতিরও বেশি শৈবাল পাওয়া যায়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে কোন ভূমিকাই রাখছে না, বরং সমুদ্রতটে অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে। 
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশ‍ালী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সেন্টমার্টিনস দ্বীপ ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের লবণাক্ত জলরাশিতে অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হওয়া এই ‘সামুদ্রিক শৈবাল’ যার বৈজ্ঞানিক নাম Hypnea sp ও  Caulerpa racemosa।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে ড. মোহাম্মদ জাফর বলেন, ‘জলজ উদ্ভিদ শৈবাল আমরা প্রতি নিয়ত অবচেতন মনে ব্যবহার করছি। চকলেক, ট্যাবলেটের বাইন্ডিংসহ নানাভাবে একে আমরা ব্যবহার করি।’
ব্রিটিশ সরকারের আর্ন্তর্জাতিক সংস্থা ডিএফআইডি (DFID) এর সোফার (SUFER) প্রকল্প এবং বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজের কারিগরি সহযোগিতায় এ গবেষণা সম্পন্ন করেছেন প্রফেসর ড. জাফর। যা দেশের জলজ উপকারী উদ্ভিদ চাষের ক্ষেত্রে একটি নতুন ও সম্ভবনাময় দ্বার খুলে দিয়েছে।
এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু ঔষুধই নয়- অর্থনীতিতেও এর অবদান রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ জাপানে জিডিপির শতকরা ১ শতাংশ অবদান রাখছে শৈবাল। চীন ও জাপানে জনগণের খাদ্যভাসে শৈবাল রাখায় ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কম। অনেক সময় ডায়রিয়ার ঔষধ হিসেবেও এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। টিউমার বৃদ্ধি রহিতকরণের পদার্থ  তো এতে আছেই।’ 
বাংলাদেশেও শৈবাল হতে অন্যতম রপ্তানি পণ্য। এই প্রয়োজনীয় জলজ উদ্ভিদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষায় সরকারি পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন তিনি। 
দেশে শৈবাল চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন জানিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে গবেষক ড. জাফর বলেন, ‘বিশ্বে সামুদ্রিক শৈবালের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১০ মিলিয়ন মেট্রিকটন। বাংলাদেশের জন্য সামুদ্রিক শৈবাল চাষ সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণা।’
‘দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে (প্রধানত সেন্টমার্টিনস দ্বীপে) সামুদ্রিক শৈবাল চাষ শুরু হয়েছে। ম্যানগ্রোভ এলাকাও প্রায় ১০ প্রজাতির শৈবাল আছে। এগুলো সংগ্রহ ও চাষাবাদ করে অনেক বেকার স্বাবলম্বীও হচ্ছে।’-জানালেন জাফর।
তবে স্থানীয় লোকদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই বলেও জানান তিনি। 
মাঠ পর্যায়ে গবেষণা তথ্যে জানা যায়, Hypnea sp (যা কুমারীর চুল বা সেমাই হিসেবে পরিচিত) একটি দ্রুত-বর্ধনশীল প্রজাতি এবং এটি যে কোন শক্ত বস্তুর উপর জন্মে। প্রবাল, পাথর, রশি, বাঁশসহ অন্য শৈবালের উপরও জন্মে এই জলজ উদ্ভিদ।
গবেষক জানান, সরকার সেন্টমার্টিনস এলাকাকে ‘ক্রিটিক্যাল জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু ওইখানে বাণিজ্যিকভাবে ও প্রাকৃতিকভাবে শৈবাল চাষ করলে পরিবেশের আরও সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সম্পাদিত এ গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০২ সালে। এর উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য সামুদ্রিক শৈবাল চাষ প্রদ্ধতির উদ্ভাবন, যা সহজেই স্থাপনযোগ্য ও চাষের অনুকূলে। এ প্রযুক্তি চাষীরা সহজেই ব্যবহার করতে পারে এবং চাষ পদ্ধতির উপাদানগুলো জৈব ও পরিবেশ বান্ধবও বটে।’
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সামুদ্রিক শৈবালের ব্যাপক চাষের উদ্যোগ, এর পুষ্টিগুণ, অর্থনৈতিক চাহিদা, জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচার-প্রচারণা, ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিলে দেশে এর বৈধ ও স্থায়ী বাজার সৃষ্টি সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন গবেষক ড. জাফর। 
‘সেন্টমাটিনস দ্বীপের স্থানীয় লোকজন জোয়ার-ভাটার অর্ন্তবর্তী স্থান থেকে সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করে সূযের্র তাপে শুকিয়ে তা প্রতি মণ ২৫০-৫০০ টাকা (৭ থেকে ৮ ডলার) হারে মিয়ানমারে বিক্রি করছে। যা যুগ যুগ ধরে চলছে।’ 
জিডিপিতে বিশেষ অবদান রাখতে পরে এই সামুদ্রিক শৈবাল দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই প্রয়োজনীয় জলজ উদ্ভিদের যদি কার্যকর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তবে মিয়ানমার ছাড়াও জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর, হংকং, ব্রাজিল, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের আন্তর্জাতিক বাজার দখল করা সম্ভব।’ 
বাংলানিউজকে ড. জাফর এ সর্ম্পকে বলেন, ‘উচ্চ পুষ্টিমান গুণসম্পন্ন এ জলজ উদ্ভিদটি ডায়াবেটিসের প্রতিরোধ হিসেবে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপই এই সামুদ্রিক শৈবাল বাংলাদেশের একটি নতুন রপ্তানি পণ্য হিসেবে যোগ হয়ে অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে পারে।’ 
বাংলাদেশ সময়:  ০৭৩১ ঘণ্টা, মে,০৪,২০১২এমবিএম/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

মধুপুরে তুলার নতুন জাত উদ্ভাবন ॥ গ্রীষ্মকালে চাষ

শীতকালীন তুলা চাষের কথা আমরা সবাই জানি। জুন-জুলাইয়ে জমিতে বীজ বপন করা হয়। আর জানুয়ারিতে সে জমি থেকে পাকা তুলা সংগ্রহ করা হয়। চিরাচরিত এ পদ্ধতিতে জমিতে বছরে মাত্র একবারই তুলা চাষ হয়। কিন্তু গ্রীষ্ককালীন তুলা চাষ? বিষয়টি একেবারেই নতুন। অত্যাধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি প্রবর্তণের সর্ব শেষ নমুনা। এ নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কৃতী গবেষকরা। এ সময়ে অধিক তুলা উৎপাদন করে চাষীরা যেমন লাভবান হবে, তেমনি দেশের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। 
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের খামার বাড়ি অফিস জানায়, সারা দেশে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টরে তুলা চাষ হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় ১৫ হাজার হেক্টর এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়, উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্রভূমি এবং বৃহত্তর যশোহর ও কুষ্টিয়ার উঁচু ভূমিতে ৩৫ হাজার হেক্টরে তুলার আবাদ হয়। এ থেকে উৎপাদন হয় বড় জোর ১ লাখ বেল। অথচ দেশে তুলার চাহিদা হলো প্রায় ৪০ লাখ বেল। অবশিষ্ট ৩৯ লাখ বেল তুলা বিদেশ থেকে আমাদানি করা হয়। শুধুমাত্র প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেই আমদানি করা হয় ২৫ থেকে ৩০ লাখ বেল। দেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় তুলা আমদানি প্রতিবছরই বাড়ছে। এ অবস্থায় কটন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড তুলার ঘাটতি মোকাবেলায় সারাবছর তুলা উৎপাদন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে একই জমিতে বছরে দু’বার তুলা চাষ করা যাবে। ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বছরে দু’বার তুলা চাষ করা হয়। তুলা চাষের প্রায় পুরোটাই জুড়ে রয়েছে হাইব্রিড। 
বাংলাদেশে তুলা চাষে গতানুগতিক পরিবর্তন আনার জন্য বোর্ড দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করে আসছিল। সম্প্রতি এ গবেষণায় সুফল মিলে। বোর্ড যশোর জেলার জগদীশপুর গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবন করে গ্রীষ্মকালীন জাত। উফসী এ জাতের নাম সিবি-১২। নিজস্ব ফার্মে পরীক্ষামূলক আবাদে সফলতা আসায় বোর্ড চাষী পর্যায়ে গ্রীষ্মকালীন তুলা নিয়ে এসেছে। এ জাতের উৎপাদন ক্ষমতা চীন থেকে আমদানি করা হাইব্রিড তুলার কাছাকাছি। বিঘাতে উৎপাদন ১০/১২ মণ। বোর্ড সুলভমূল্যে কৃষক পর্যায়ে এ বীজ সরবরাহ করছে। চীন থেকে আমদানি করা প্রতিকেজি হাইব্রিড বীজের দাম যেখানে দুই হাজার টাকা সেখানে বোর্ড উদ্ভাবিত সিবি-১২ জাতের দাম মাত্র ২২ টাকা কেজি। 
গ্রীষ্মকালীন তুলা চাষকে জনপ্রিয় করার জন্য বোর্ড ‘গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ নামে একটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। উদ্দেশ্য সারাবছর তুলা চাষ। এর আওতায় দেশের ১৮টি জোনের প্রতিটিতে ৫টি করে অংশীদারিত্ব গবেষণা পট স্থাপন করা হয়েছে। ময়মনসিংহ কটন জোন অফিস মধুপুর ইউনিটের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ধরাটি গ্রামের আবুল হোসেনের দুই বিঘা জমিতে তুলার গ্রীষ্মকালীন পট স্থাপন করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে চারা রোপণ হয়েছে। ইতোমধ্যে সবুজ চারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আগামী মে মাসে জমি থেকে পাকা তুলা সংগ্রহের আশা করছেন বোর্ড।
কটন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ঢাকা রিজিয়নের উপ-পরিচালক ফখরে আলম ইবনে তাবিব জানান, গ্রীষ্মকালীন তুলা চাষে সেচের প্রয়োজন পড়ে। এজন্য যান্ত্রিক সেচের সুবিধা রয়েছে এমন সব এলাকায় গ্রীষ্মকালীন তুলা চাষ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, গ্রীষ্মকালীন চাষের মাধ্যমে বাড়তি তুলা উৎপাদন এবং আমদানি নির্ভরতা কমানোই বোর্ডের মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি। তুলা চাষী আবুল হোসেন জানান, তিনি দেড় দশক ধরে জমিতে তুলা চাষ করেন। এবার অনেকটা কৌতূহলবশত বোর্ডের কথায় জমিতে গ্রীষ্মকালীন তুলা লগিয়েছেন। সেচ, সার ও পরিচর্যা বেশি লাগছে। উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে বলে মনে হচ্ছে। এবার তুলার দাম ছিল খুবই কম। অনেক চাষী উৎপাদন খরচও তুলতে পারেনি। এমতাবস্থায় তুলার সংগ্রহ মূল্য না বাড়ালে গ্রীষ্মকালীন তুলা চাষে কৃষকরা এগিয়ে আসবে কীনা সেটি দেখার বিষয়। 
এদিকে তুলা চাষকে জনপ্রিয় এবং জেলার মাঠ পর্যায়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা স্কুল প্রাঙ্গণে তুলা চাষী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কৃষিবিদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মতিয়ার রহমান। বক্তব্য রাখেন উপ-পরিচালক ড. ফরিদ উদ্দীন, প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আখরুজ্জামান, উপ-পরিচালক ফখরে ইবনে তাবিব এবং মধুপুর ইউনিট প্রধান মোফাজ্জল হোসেন।

সুত্র

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

খরা ও লবন সহিষ্ণু ধান আবিস্কারে বাংলাদেশ সফল : কৃষিমন্ত্রী

নিউজ বিএনএ ডটকম, ঢাকা, ৮ এপ্রিল : কৃষিনির্ভর
বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইতোমধ্যে খরা ও লবণ সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনে সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এই তথ্য জানান।

এসময় দেশের কৃষিখাতের আধুনিকায়ণে চীনের উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তরেরও আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন,কৃষিখাতের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বাংলাদেশে জৈব প্রযুক্তির প্রসার, পানি ব্যবস্থাপনা, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন, পণ্য বিপণন, তথ্য বিনিময় এবং গবেষক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে চীন সহায়তা দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশে নব নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন’র সম্মানে রাজধানির রূপসী বাংলা হোটেলে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।

বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল এ সংবর্ধনার আয়োজন করে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নবাগত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন বক্তব্য রাখেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে মহাজোট সরকার বহুপক্ষীয় যোগাযোগ জোরদার করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, চীনের সহায়তায় বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া দ্বীপের নিকটবর্তী এলাকায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

বাংলাদেশের সাথে চীনের কুনমিং পর্যন্ত সড়ক ও রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা গেলে দু‘দেশের বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি এক্ষেত্রে নতুন নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের সহায়তা কামনা করেন।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বন্ধুপ্রতীম বাংলাদেশের সাথে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্য দিন দিন বাড়ছে। ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য শতকরা ১৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ৮ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

২০১০ সালে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি শতকরা ৯১ ভাগ এবং ২০১১ সালে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে এ প্রবৃদ্ধির পরিমাণ একশ‘ ভাগে উন্নীত করা হবে বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাফর উল্লাহ, সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »