সফল বাংলাদেশ

সফল বাংলাদেশ: সব সফলতার খবর আলোচনা হোক গর্বের সাথে

বাংলার মেয়ের এভারেস্ট জয়

চালু করুন মে 23, 2012

 

রবিবার, ২০ মে ২০১২, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯
বাংলার মেয়ের এভারেস্ট জয়
০ নিশাত মজুমদারের সাফল্যে উদ্বেল সারাদেশ
০ প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেত্রীর অভিনন্দন
শাহীন রহমান ॥ এবার এভারেস্ট বিজয়ী খাতায় প্রথমবারের মতো নাম লেখালেন বাংলাদেশের নারী নিশাত মজুমদার। শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় অপর সঙ্গী এমএ মুহিতের সঙ্গে সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণ করেন। তারা দু’জনই বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবের সদস্য হিসেবে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে এভারেস্ট অভিযান শুরু করেন। এ ক্লাবের সদস্য এমএ মুহিতই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন। গত বছর ২৫ মে মুহিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্টের চূড়া জয় করেন। বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাব নিশাত মজুমদার ও এমএ মুহিতের এভারেস্ট বিজয়ের খবর নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুসা ইব্রাহিম প্রথমবারের মতো এভারেস্ট জয়ের স্বাদ এনে দেন। ২০১০ সালের ২৩ মে তিনি সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণ করেন। নিশাত মজুমদার ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের কোন নারীর প্রথম এভারেস্ট বিজয়ের খবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎক্ষণিতভাবে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এছাড়া সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াও নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয়ের খবরের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রথম নারী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার ঢাকা ওয়াসার হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তার বাবা আব্দুল মান্নান মজুমদার একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচিত সম্পাদকম-লীর সদস্য। নিশাত মজুমদার যেমন এভারেস্ট বিজয়ী প্রথম নারী তেমনি এমএ মুহিত প্রথম ব্যক্তি যিনি এভারেস্টে উভয় চূড়া দিয়ে পর্বত আরোহণ করেছেন। জানা গেছে, গত বছর তিনি তিব্বতের দিক দিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় উঠলেও এভার তিনি নেপালের দিক দিয়ে এভারেস্ট বিজয় করেছেন। নিশাত মজুমদার ও এমএ মুহিতের এবারের পর্বতারোহে সঙ্গে ছিলেন নেপালের তিনজন শেরপা। গ্রীনিজ বিজয়ী শেরপা নেপাল থেকে জানিয়েছেন তার ভাই ক্যাম্প টু থেকে নিশাত ও মুহিতের এভারেস্ট বিজয়ের খবর তাকে নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এনামুল হকও পেম্বা দর্জির মাধ্যমে ক্লাবের সদস্য দুজনের এভারেস্ট বিজয়ের খবর পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। জানা গেছে, শুক্রবারের আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে তাদের এ অভিযান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সব অনিশ্চয়তার আঁধার কাটিয়ে শনিবার সকালেই তাদের এভারেস্ট বিজয়ের খবর পাওয়া যায়।
এদিকে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মেয়ে নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয়ের খবরে খুব খুশি তার বাবা আব্দুল মান্নান মজুমদার। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর গর্বে বিষয় কিছু হতে পারে না। তা মাও এ খবরে আনন্দে আত্মহারা। তিনি বলেন, এ খবরে তার খুব আনন্দ লাগছে। তবে মেয়ে দেশে না ফেরা পর্যন্ত শান্তি লাগছে না। বাংলা মাউন্টেয়ারিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নিশাত মজুমদারের পর্বতারোহের কৃতিত্ব বাংলাদেশের সব পর্বতারোহীকে গর্বিত করেছে। এখন বাংলাদেশের অনেক কিছুই ঘটছে যা আগে নারীদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। তার এভারেস্ট বিজয় মহিলাদের এবং নারী উন্নয়ন উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্দীপনার বিষয়।
এছাড়া এভারেস্ট অভিযানে থাকা বাংলাদেশের অপর এক নারী দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে অভিযান থেকে ছিটকে পড়েছেন। জানা গেছে ওয়াসফিয়া নাজরীন তাঁর সহযোগী শেরপারা ক্যাম্প থ্রিতে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। গত শুক্রবার সকালে ভয়াবহ তুষার ধসে ওয়াসফিয়ার তাঁবু ল-ভ- হয়ে যায়। এতে তাঁর সহযোগী দুই শেরপা আহত হয়েছেন এবং একজন নিখোঁজ। এ কারণে ওয়াসফিয়ার সামিট পুশ (চূড়ার দিকে যাত্রা) বিলম্বিত হয়েছে।
বাংলাদেশের কোন নারী হিসেবে নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয়ের খবরে অনেককেই আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অনেক সংগঠনে পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। তারা বলেন, প্রথম কোন নারী হিসেবে নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয় জাতির জন্য বিরাট সম্মান বয়ে এনেছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর অভিনন্দন বার্তায় বলেন, নিশাত মজুমদারের সাহসিকতায় দেশবাসী গর্বিত। প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে নিশাত বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করায় দেশবাসীর সঙ্গে আমিও গর্বিত। প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে এ প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে নিশাত মজুমদার বাঙালীর সাহসিকতা পরিচয় দিয়েছেন। তার এ সাফল্য আগামী প্রজন্ম অনপ্রাণিত হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ এভারেস্ট বিজয়ে বাংলাদেশের প্রথম বিজয়ী মহিলা নিশাত মজুমদারকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেন এ গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মুুখ উজ্জ্বল হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বাংলাদেশী নিশাত মজুমদারের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে বলেন, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশী অন্য নারীরা তার এ সাফল্য অনুকরণের মাধ্যমে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অনুপ্রাণিত হবে। তিনি বলেন, এক মহিলা হয়েও এভারেস্ট বিজয় সারাবিশ্বে স্বজাতির মাথাকে উন্নত করেছে। সারাদেশের জনগণ নিশাত মজুমদারের এই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে। আমিও তাদের আনন্দে নিজেকে শামিল করছি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও এভারেস্ট বিজয়ী হওয়া ঘটনায় নিশাত মজুমদারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শনিবার এক বার্তায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের মেয়েরা আজ রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক কর্মকা- বিচারাঙ্গন, ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানাবিধ অঙ্গনে তাদের পদার্পণ সাফল্যের সঙ্গে অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে আগেই উত্তোলিত হয়েছে। এবার সেই পতাকাটি এক মহিলার উদ্যোগে উড়বে এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। এদিকে নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহিম। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রথম বাংলাদেশী মেয়ে হিসেবে এভারেস্ট বিজয় একটা আনন্দের বিষয়। এতে প্রমাণ হয়েছে মেয়েদের অসাধ্য কিছু নেই। এত বড় বিষয় এ কারণে ছেলেরা এবং মেয়েরা চাইলে সমানতালে লড়তে পারে। চ্যালেঞ্জ তা যত বড় হোক না কেন সব জাগাতে মেয়েরা সমানভারে পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম। 
নিশাত মজুমদার প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করায় আরও অভিনন্দন জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন ( অব) এতি তাজুল ইসলাম এমপি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ( অব) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানউদ্দিন আহমেদ রাজা, মহাসচিব ( প্রশাসন) এমদাদ হোসেন মতিন, মহাসচিব (অর্থ) মনোয়ারুল হক খান লাবলু, মহাসচিব (অর্থ) মনিরুল হক, যুগ্ম মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীর প্রতীকসহ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
তবে নিশাত মজুমদার মেয়ে হিসেবে এভারেস্ট বিজয় করলেও এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টে পৌঁছানোটা খুব সহজ ছিল। তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে বন্ধুর পথ, মোকাবেলা করতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতা। ছোটবেলা থেকে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় নিশাত। নিশাতের জন্ম লক্ষ্মীপুরে। দুই বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। রাজধানীর বটমুলী হোম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা সিটি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কিছু দিন কাজ করেছেন। সেখান থেকেই ইনাম আল হকের সঙ্গে পরিচয়। তারপর বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবে (বিএমটিসি) যোগদান।
হিমালয় পর্বতকে জয় করতে হবেই এ উপলব্ধি থেকে বিএমটিসি হিমালয়ে অভিযানের জন্য প্রথম মহিলা দল পাঠায়। সেটি ২০০৬ সালের সেপ্টেম্ব^রের কথা। সেই দল প্রথম এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। পাঁচজনের সেই দলের কনিষ্ঠতম সদস্য ছিলেন নিশাত মজুমদার। এরপর দেশের প্রথম নারী পর্বতারোহী সাদিয়া সুলতানার নেতৃত্বে ২০০৬ সালের নারী দিবসে কেওক্রাডাং ট্রেকিংয়ে অংশ নেন নিশাত।
২০০৮ সালের ৪ জুন নেপালে হিমালয় পর্বতমালার অন্নপূর্ণা হিমালে সিঙ্গাচুলি পর্বতে ওঠেন নিশাত। যার উচ্চতা ২১ হাজার ৩২৮ ফুট (ছয় হাজার ৫০১ মিটার)। ওই অভিযানে সিঙ্গাচুলি অভিযানের পুরো দলের নেতৃত্ব দেন নিশাত মজুমদার। ১৯৭৫ সালের ১৬ মে জাপানের জুনকো তাবেই বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ এ পর্বত জয় করেন স্টেসি অ্যালিসন ১৯৮৮ সালে।

 


মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

%d bloggers like this: