সফল বাংলাদেশ

সফল বাংলাদেশ: সব সফলতার খবর আলোচনা হোক গর্বের সাথে

বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে

চালু করুন মে 20, 2012

NewImage

সুত্র

ড. আহমদ আল-কবির
বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা ‘মিরাকল’ (গরৎধপষব)। উন্নয়নের সূচকগুলো বিবেচনায় নিলে বিশেষ করে আর্থসামাজিক অবস্থার বিচার-বিশ্লেষণ করলে এমন প্রতীতি জন্মাবে যে বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ। সাধারণভাবে পাঠ্যবইয়ে অর্থনীতির যেসব তাত্তি্বক বিষয় পড়ানো হয়, তা বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি ও প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মেলানো কঠিন। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘দারিদ্র্য বিমোচনকে’ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াই চালিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বর্তমান দরিদ্রের হার ২৮ শতাংশ যা ২০০৬ সালে (গত বিএনপি সরকারের শেষ বছর) ছিল ৪০ শতাংশের উপরে। কৃষি, শিক্ষা, মা ও শিশুমৃত্যু, তথ্যপ্রযুক্তি ও বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ অন্যান্য সামাজিক খাতে যুগান্তকারী উন্নয়নের পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও মাথাপিছু আয়সহ অর্থনীতির অনেক সূচকে ব্যাপক উন্নতি আমাদের প্রবৃদ্ধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। গত তিন বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ শতাংশেরও অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ও ২০১১-১২ সালে ৬.৭ শতাংশ অতিক্রম করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ হার গড়ে ৩.২ শতাংশ এবং ১৯৯০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত গড়ে ৪.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হচ্ছিল। বাংলাদেশের এউচ প্রবৃদ্ধির হার পাকিস্তান, নেপালসহ এ২০-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো (আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান ইত্যাদি) থেকে ও ২০১১ সালে ভালো অবস্থানে (২৪তম) আছে। 
২০১৫ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে ১৬টি দেশ সাফল্য দেখাতে পেরেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, নারী উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা ও কৃষি উন্নয়ন বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে বলে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে স্পষ্ট করেই বলেছেন। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে উত্তরোত্তর সাফল্য অনেক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞের কাছে আদর্শ হিসেবে কাজ করছে। জাতিসংঘের ৬৬টি শান্তি মিশনের মধ্যে ৪৫টি মিশনেই বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে এবং দুটি মহিলা শান্তিরক্ষী দল পাঠাতে সক্ষম হয়। বিশ্ব ফোরামে বাংলাদেশের সাফল্যের মধ্যে ২০১০ সালের গউএ অধিৎফ-৪, ২০১১ সালে ঝড়ঁঃয ঝড়ঁঃয ঘবংি অধিৎফ, এবং ২০১০ সালে বাংলাদেশের দুটি ঘএঙ কর্তৃক ঊহবৎমু ওহহড়াধঃরড়হ অধিৎফ লাভ করা অন্যতম। এছাড়াও বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ঈষরসধঃব ঈযধহমব, ঞবৎৎড়ৎরংড়স ও ঠরড়ষবধহপব-সহ সব আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
২০০৭-০৯ সালব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বিশ্ব অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ালেও ২০১১ সালে আবারও একটি বড় ধাক্কা ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশ এ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে হচ্ছে। মন্দা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে উন্নত ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলো বিপুল বাজেট ঘাটতি, উচ্চ সরকারি ঋণ (ঢ়ঁনষরপ ফবনঃ) মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের হার বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দেশের সার্বভৌম ঋণ (ংড়াবৎবরমহ ফবনঃ) সমস্যা প্রবৃদ্ধির গতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি উন্নত দেশের চলতি হিসাবে বিশাল আকারের ঘাটতি এবং জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশ ও কয়েকটি বিকাশমান অর্থনীতির চলতি হিসাবে বিশাল আকারে উদ্বৃত্ত বিশ্ব অর্থনীতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে। এ ভারসাম্যহীনতা কমিয়ে আনার ব্যর্থতা বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে অনেকটা নাজুক করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে নীতি নির্ধারণে সমন্বয়ের অভাবও বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার কার্যক্রমকে বিলম্বিত করছে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার শুরুতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এর বিরূপ প্রভাব না পড়লেও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক থেকে রপ্তানি ও আমদানি খাতে কিছুটা প্রভাব পড়ে যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মন্দা-পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেরও বৈদেশিক বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় এবং ২০১০-১১ অর্থবছরের রপ্তানি ও আমদানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২৩ বিলিয়ন ও ৩২ বিলিয়ন ডলার (যা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ১০.৫ বিলিয়ন ও ১৪.৭ বিলিয়ন ডলার)। ২০১১ সালের শেষ ছয় মাসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় আবারও বাংলাদেশে চাপ অনুভূত হচ্ছে এবং এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি ও সরকারি ঋণের বৃদ্ধি ঘটছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিশ্বমন্দার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে যথাযথ আগাম ধারণা অর্জন এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক উদ্যোগ ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের মতো নানাবিধ সহায়তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে মন্দার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। মন্দার প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যে আবাসন শিল্পে ধস নামা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশ হতে শ্রমশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কিছুটা হ্রাস পায়। তবে এ সময় রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকে এবং ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয় যথাক্রমে ২২.৪২ শতাংশ ও ১৩.৪০ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেলেও জানুয়ারি, ২০১১ সাল থেকে তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং তা ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১.৬৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে (২০০৫-০৬ বছরে এর পরিমাণ ছিল ৪.৮৭ বিলিয়ন ডলার)। কর্মসংস্থান বাড়ানো ও বেকারত্ব কমাতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪৬তম যা তার পাশের দেশ ভারত (১১১তম), আফগানিস্তান (১৮০তম), পাকিস্তান (১৫২তম) এবং নেপাল (১৯০তম) থেকে অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পঞ্চম জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা বজায় থাকা ও মন্দা-পরবর্তী বিশ্বব্যাপী পণ্য ও সেবার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দেশের রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্যে যেমন উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক ও রাজস্ব খাতে গৃহীত ব্যবস্থার পাশাপাশি মুদ্রা খাতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ধানের ভালো উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকায় আগামী মাসগুলোয় বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা যায়। রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস ও বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১০-১১ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত হ্রাস পেয়েছে। এ সময়ে বিনিময় হারের অবনতি ঘটেছে। তা সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সহনশীল পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১১ সালের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ৯.৫ বিলিয়ন ডলার। জানুয়ারি ২০১১ থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং অবকাঠামো খাতে সরকার যে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছে তার সফল বাস্তবায়ন অর্থনীতিতে অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করবে যা দেশকে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
উন্নত বিশ্বের তথ্য মাধ্যমে সাধারণত বাংলাদেশ সম্পর্কে ২০০৯ সালের আগে পর্যন্ত নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশিত হতো। এ খবরগুলো সুখকর ছিল না। বন্যা, খরা, অপুষ্টি, খাদ্যস্বল্পতা, আর্থিক সংকট ইত্যাদি বিষয় পশ্চিমা পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন তুলে ধরতে সচেষ্ট ছিল। অথচ এ দেশের যে গর্ব করার মতো অর্জন হয়েছে সে সম্পর্কে তারা নিশ্চুপ থাকতে পছন্দ করত। বাংলাদেশ মানেই হতাশা ও ব্যর্থতা, এটাই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে এতদিন প্রতিষ্ঠিত ছিল। বিশ্বমন্দা উত্তরণের সময়ে বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য, সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে নজরকাড়া অর্জন, পরিবার পরিকল্পনা, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে বৈপ্লবিক উন্নতি, শিক্ষা বিশেষ করে নারীশিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয়ে সংবাদ প্রায়ই বেরোচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু গড় আয় ২০০৬ সালে ৪৮৭ ডলার থেকে ২০১১ সালে ৮১৮ ডলারে পেঁৗছেছে_ তা বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নত করার লক্ষ্যে বড় অর্জন বলে আমরা মনে করি।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের কতিপয় মহলের চিন্তা ও প্রচারণা খুবই নেতিবাচক। বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক নেতা, গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবী দেশটাকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লেগে গেছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচক ঋণাত্মক, এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় নিঃশেষ হয়ে আসছে, পুঁজিবাজারের অচলাবস্থা শেষ হবে না, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলোর কাছে আমাদের ভাবমূর্তি উত্তরোত্তর সংকটের মধ্যে পড়েছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ থমকে আছে, সর্বোপরি সর্বত্র সুশাসনের অভাব দেখা দিয়েছে এবং মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে, এ মর্মে প্রচুর বক্তব্য আমরা দেখি ও শুনি। 
আমি এসব সম্মানিত বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক-পেশাজীবী (আমাদের দেশে রাজনীতিকেও অনেকে একটি অর্থকরী পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন) ও টক শো আয়োজকদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। মোটা দাগে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কখনো ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি এ দেশে দেখা যায়নি। স্বাধীনতার আগে ও পরে এদেশে মাত্র কয়েক বছর অর্থনীতির অবস্থা খারাপ ছিল এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের অর্থনীতি নাজুক থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। স্বাধীনতার পরপর এদেশে মাত্র কয়েকশ কোটি টাকার বাজেট ছিল। এখন তা লাখো কোটি অতিক্রম করেছে। এটা যে কোন মাপকাঠিতে খুব বড় একটি অর্জন এবং এটা নিয়ে বিজয়ের ৪০ বছরপূর্তিতে আমরা গর্ব করতে পারি।
বৈশ্বিক মন্দার অভিঘাত মোকাবিলায় যথেষ্ট দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৬৬ শতাংশে। কৃষি খাতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার পাশাপাশি শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ানো এবং সেবা খাতের সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি সার্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। এ সময়ে রাজস্ব আহরণের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সুষ্ঠু বাজেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজস্ব আহরণের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সুষ্ঠু বাজেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজস্ব খাতে শৃঙ্খলাও বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বিশ্বের যে কোন উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঈর্ষার বিষয়। মোট জাতীয় উপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০১১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ২৪তম ছিল (২০১০ সালে বাংলাদেশের এ অবস্থান ছিল ৫৫তম), এর অর্থ হলো বিশ্বে এখন ১৯১টি স্বাধীন দেশ রয়েছে, যাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে কম। বিগত ৩ বছরে বাংলাদেশ গড়ে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। এ বছর তা ৬.৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়। তারপরও কি আমরা বলব বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র?
আমদানি ও রপ্তানি খাতে ২০১০-১১ অর্থবছরে ব্যাপক বৃদ্ধি অনেক বিশ্লেষককে আশ্চর্যান্বিত করেছে। এ দুই ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ার শীর্ষ তিনের মধ্যে। পরিসংখ্যান দেখলে তা সহজেই বোঝা যায়। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা প্রথম। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা নতুন বাজারে প্রবেশ করছি। রপ্তানিতে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের গার্মেন্টস খাতের সঙ্গে রেমিট্যান্স ও ওষুধ খাত প্রতিযোগিতা করবে। এছাড়া মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে পারলে সে খাতটিরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানির বড় সুযোগ রয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে বাজার ধরতে পারলে রেমিট্যান্স কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব।
খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানি মূল্য বিশ্বের সর্বত্রই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এটি হ্রাস পাবে এমন সম্ভাবনা কম। সম্মানিত বৃদ্ধিজীবীদের আলোচনা শুনলে মনে হয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যর্থতার জন্যই দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের অবগতির জন্য বলছি যে, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় একই রকম। স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে দরিদ্রের হার কমছে এবং এ বছর তা ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে বাজার বিশ্লেষক ও রাজনীতিকরা তাদের নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী পুঁজিবাজারের ২০১১ সালের নিম্নমুখী প্রবণতা বিশ্লেষণ করলেও বর্তমানে সঠিক অবস্থা অনেকটা পরিষ্কার। আমি মনে করি পুঁজিবাজারে উত্থান ও পতন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার এবং বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক সরবরাহ বিবেচনায় নিয়ে ২০১০ সালে শেষের দিকে সূচকে ব্যাপক উত্থান ছিল অস্বাভাবিক। এ সময়ে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী তাদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে বাজার থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১ হাজার ৪৯১ জন পরিচালকের শতকরা দুই ভাগের কম শেয়ার তাদের নিজ কোম্পানিতে আছে। এছাড়াও ৩৮টি কোম্পানির স্পন্সর ও পরিচালকদের শতকরা ৩০ ভাগের কম শেয়ার তাদের মালিকানায় আছে। এসব কোম্পানি ও পরিচালকরাই তাদের শেয়ার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করেছিলেন এবং তারা (ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী) তাদের মূলধন হারিয়েছেন। সরকার এ ধরনের অব্যবস্থা রোধে ডি-মিউচুয়েলাইজেশন করার উদ্যোগসহ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করে এসইসিকে পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে এসব ব্যবস্থার বাস্তবায়নকে সবাই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। পুুঁজিবাজারকে তার নিজস্ব গতিতে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে তাদের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি নির্দেশনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
দেশে মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ ইত্যাদি নিয়ে অধুনা অনেক নেতিবাচক কথাবার্তা হচ্ছে। এ সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বগামী থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ আমাদের গার্মেন্টস খাতের সাফল্যের পথ ধরে এগিয়ে এসেছে ওষুধ শিল্প, চামড়া, পাদুকা শিল্প, সফটওয়্যার সামগ্রী ও প্রসাধনী শিল্প। এছাড়া মানবসম্পদের উন্নয়ন করে বিদেশের শ্রমবাজারে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মানবসম্পদ রপ্তানির মাধ্যমে শ্রমবাজারগুলো ধরে রাখতে পারলে রেমিট্যান্স আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করা যাবে যা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট অবস্থানে ইতিবাচক প্রতিঘাত ফেলবে। বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী সবার কর্মসংস্থানের জন্য যুবসমাজকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে প্রশিক্ষণ প্রদানে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করতে হবে। এ সুযোগ তৈরি করার জন্য সরকারকে সহায়ক হিসেবে কাজ করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সুস্পষ্ট নীতিমালা ও লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে। বর্তমান সরকারের ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়াই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একমাত্র রক্ষাকবচ। তাই সব অর্থনৈতিক কর্মকা-ে (যথা ট্যাক্স ও রেভিনিউ সংগ্রহ, ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি) বর্তমান সরকারের ঘোষিত ব্যবস্থাগুলো কৃতিত্বের দাবিদার।
পাশাপাশি তরুণ পেশাজীবীদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া জরুরি। তরুণ পেশাজীবীদের আমি সম্মান করি। উন্নতির জন্য দুটি বিষয় খুবই জরুরি। একটা হলো মানবসম্পদ উন্নয়ন, অন্যটি তরুণ পেশাজীবীদের গুরুত্ব প্রদান। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ লোকের বয়স ৪০ বছরের নিচে আর ৩৪ শতাংশ ১৪ বছরের নিচে। এ দুটি অবস্থা থেকে বোঝা যায়, তরুণদের কথার বা মতামতের প্রতিফলন যদি না করা হয়, তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন অথবা রাজনৈতিক উন্নয়ন কোনটিই অর্জন করা সম্ভব নয়।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য আমাদের অর্থনীতি পূর্ণমাত্রায় গতিশীল হতে পারছে না। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন। পর্যাপ্ত গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য। উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাও জরুরি। আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতা আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। 
আমলাতন্ত্রের দক্ষতার অভাবে প্রচুর অর্থব্যয় সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আশানুরূপভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে না। এমনকি বৈদেশিক সহায়তা যথাযথ ব্যবহারের অপারগতায় বিভিন্ন প্রকল্পের অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি ও অনেক অর্থ অব্যবহৃত থেকে ফেরত যাচ্ছে। এসব প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও সবসময় আমাদের অর্থনীতিকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের খামখেয়ালিপনা, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও অস্থিরতা, বিশ্ববাজারে তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি আমাদের অর্থনীতির ভিত নাড়িয়ে দেয়।
জাতি গঠনে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই তাদের যুক্তিনির্ভর, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ হওয়া জরুরি। সত্য গোপন করে বা আংশিক গোপন করে পূর্বাপর সূত্রহীন কোন তথ্য সাময়িক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করতে পারে, তবে এ থেকে দীর্ঘদিন ধরে কোন ফায়দা নেয়া যায় না। যদি তারা পক্ষপাতদুষ্ট হন এবং মহল বিশেষের ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির প্রতিভূ হিসেবে কাজ করেন তবে শেষ পর্যন্ত তারা জনসাধারণের আস্থা ও সমর্থন হারাবেন। দেশে মতপ্রকাশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে, তবে আমার মতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যুক্তিতর্কের ও উপাত্তের সাহায্যে মতামত প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়া উচিত অন্যথায় আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।


মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

%d bloggers like this: