সফল বাংলাদেশ

সফল বাংলাদেশ: সব সফলতার খবর আলোচনা হোক গর্বের সাথে

চার জাতির গ্যাস পাইপলাইনে যুক্ত হতে চায় বাংলাদেশ

NewImage

মানবজমিন ডেস্ক: তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তান ও ভারত গ্যাস কেনাবেচা সংক্রান্ত চুক্তি সই করার পর এবার বাংলাদেশ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর দ্বারস্থ হয়েছে। বাংলাদেশ ৪ জাতির ওই গ্যাস পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে এডিবি’র কাছে চিঠি লিখেছে বাংলাদেশ। গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন

পাকিস্তান টুডে। ‘বাংলাদেশ ওয়ান্টস টু ফিট ইন্টু দ্য পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- কি পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। এর জবাবে তিনি বলেছেন, তাদের চাহিদা অল্প। যেহেতু আফগানিস্তান তাদের চাহিদার অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তা বাংলাদেশকে দেয়া যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে এই পাইপলাইনের কাজ ৪ জাতির মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। বাংলাদেশ এতে যুক্ত হতে পারে তার পরে। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে একক উদ্যোগে। ইরান ও পাকিস্তানের (আই-পি) গ্যাস পাইপলাইন সম্পন্ন হয়েছে যৌথ উদ্যোগে। কিন্তু চার জাতির এ প্রকল্প সেভাবে হবে না। ১৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের নির্মাতা উদ্যোক্তা এরই মধ্যে খোঁজা শুরু হয়েছে। এতে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ৭৬০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ যদি এতে যুক্ত হয় তাহলে পাইপলাইন বিস্তৃত করে ২৫০০ কিলোমিটার করা হবে। এ পাইপলাইনে এরই মধ্যে ৭ হাজার কিলোমিটার ব্যবহার করে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। চূড়ান্তভাবে মূল উদ্যোক্তা নির্বাচন করার পর এ প্রকল্পের প্রকৌশলগত ডিজাইন নিয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই প্রকল্প সম্পন্ন করতে হবে ২০১৭ সালের মধ্যে। আইপি গ্যাসের দাম নিয়ে দর কষাকষি প্রসঙ্গে সূত্র বলেছে, এ প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে। কারণ ইরানের গ্যাসের চেয়ে তুর্কমেনিস্তানে গ্যাসের দাম কম। পাকিস্তান যদি অন্য কোন উৎস থেকে কম দামে গ্যাস কিনতে পারে সেক্ষেত্রে আইপি চুক্তিতে গ্যাসের দাম নিয়ে সমঝোতার একটি অংশ রাখা হয়েছে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

মধুপুরে পাম্প টিউবওয়েলের উদ্ভাবক তারিকুল

ভোরের কাগজ / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য : ২৭/০৫/২০১২অর্থ শিল্প বাণিজ্য ডেস্ক : এক সময়ের দিনমজুর হতদরিদ্র ও বেকার তারিকুল ইসলামের জীবনচিত্র এখন পাল্টে গেছে। দেশের মধ্যে প্রথম ৩ ধরনের আধুনিক পাম্প টিউবয়েল উদ্ভাবন করে খুঁজে পেয়েছেন সুখের ঠিকানা।
প্রথমে তিনি শুরু করেন শ্যালো মেশিনের মেকানিক্যালের কাজ। প্রায় ৫ বছর মেশিনের কাজ করে এলাকাজুড়ে সুনাম অর্জন করেন শ্যালো মেকার হিসেবে। এ কাজ করার পাশাপাশি তারেক চিন্তা করতে থাকেন নতুন কিছু তৈরি করার। তারপর ১৯৮৮ সালে বাড়িতে বসেই শুরু করেন পুরোনো শ্যালো মেশিনের যন্ত্রপাতির ক্রয় করা। শ্যালো মেশিনের পুরোনো লায়নার, রিক্সা-ভ্যানের পুরোনো এক্সএল, বেয়ারিং, পুরোনো লোহার পাইপ, মেশিনের ওয়ারস্যালন প্রভৃতি সংগ্রহ করেন। লায়নার দিয়ে টিউবয়েলের বডি, রিকশার এক্সেল দিয়ে হাতল, পাইপ দিয়ে টিউবয়েলের গোড়ার অংশ এয়ারগ্যালন দিয়ে উপরের অংশ তৈরি করে ঝালাই দিয়ে বেয়ারিং লাগিয়ে তৈরি করেন টিউবয়েল। খবর বাসসের। প্রথমে নিজের বাড়িতে লাগান নতুন উদ্ভাবিত টিউবয়েল। তার টিউবয়েলের নাম রাখেন ‘তারেক পাম্প’। তারপর ২০০২ সালে তার নিজ গ্রাম ভবানীটেকি চৌরাস্তা মোড়ে খুলে বসেন ছোট আকারের ওয়ার্কশপ।
যে এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই সে এলাকার বিল্ডিংয়ের ছাদের ট্যাংকিতে পানি উঠানোর জন্য তৈরি করেন ‘প্রেসার পাম্প টিউবয়েল’। যতো বেশি প্রেসার দিয়ে টিউবয়েলটি চাপা হবে ততো বেশি ওপরে পানি উঠবে। টিউবয়েলের মুখে রাবারের পাইপ লাগিয়ে হাতলে প্রেসার দিতে থাকলে ১/২শ’ ফুট ওপরে পানি ওঠানো সম্ভব বলে তারেক জানান। এ তিনটি টিউবয়েলেই ১শ ফুট গভীর থেকে পানি ওঠানো যায়। স্থান উঁচু হলেও কোনো সমস্যা নেই। তারেকের এ তিনটি পাম্প টিউবয়েল তৈরির ওয়ার্কশপের নাম দিয়েছেন ‘হাসান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’। তার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে ২ জন কর্মচারী মাসিক বেতন হিসেবে কাজ করছে। প্রথমে এলাকায় পাম্প টিউবয়েলগুলো বিক্রি হলেও এখন আশপাশের জেলাগুলোতেও বাড়ছে তারেকের টিউবয়েলের চাহিদা।
টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর শহর থেকে ১০ কি:মি: উত্তরে অরণখোলা ইউনিয়নের ভনানীটেকি গ্রামে ১৯৭৫ সালে তারেক জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আব্দুস ছামাদ। মায়ের নাম জহুরা বেগম। তারেক জানান, ‘সাধ আছে, সাধ্যের অভাব। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে টিউবয়েল তৈরির উপকরণ ক্রয় করতে পারছি না। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি আমার পাম্পগুলো একটু বেশি পরিমাণে বিক্রি করতে পারতাম তাহলে আমার এগিয়ে যেতে সহজ হতো।’ একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে তার তৈরি টিউবয়েলগুলো নেয়ার দাবি জানান তিনি।
গত ২০১০ সালের মধুপুর কৃষি মেলায় খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ‘ডায়াবেটিক পাম্প টিউবয়েল’ দেখে প্রশংসা করেন। তারেক জানান, ‘আমি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্কশপে গিয়ে কাজ করি, ঝালাই মেশিন ও হাতুড়ের আঘাতে তৈরি পাম্প দেখে আমার খুব ভালো লাগে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

জাতিসংঘের বিশেষ শিক্ষা প্রবর্তনের সদস্য হল বাংলাদেশ


NewImage

জাতিসংঘের বিশেষ শিক্ষা প্রবর্তনের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বিশ্বের ১০টি উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের সরকার প্রধানকে নিয়ে বিশেষ শিক্ষা প্রবর্তন চালু করছেন। শিক্ষাখাতে বিপুল সাফল্য অর্জিত হওয়ায় বাংলাদেশ এর সদস্যপদ লাভ করলো। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সদস্যপদ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন। নিউইয়র্কে   জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে স্থানীয় সময় শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র সফররত শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ড. আশা রোজ মিগিরোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তার অফিসে মিলিত হন। সাক্ষাত্কালে ড. আশা রোজ মিগিরো বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে অভূতপূর্ব উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বাংলাদেশের শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও সংস্কার বিষয়ে ডেপুটি সেক্রেটারী জেনারেলকে অবহিত করেন শিক্ষামন্ত্রী। বিশেষ করে বাংলাদেশের ছাত্রী বৃত্তির সুফল হিসাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্জন বিষয়ে আলোকপাত করেন। শিক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্বল বিষয়গুলো যেমন কোয়ালিটি অব এডুকেশনের উন্নয়ন এবং ঝরে পড়ার হার উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ২০১৫ সালের সহস াব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ছাত্র-ছাত্রীদের জেন্ডার পেরিটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অর্জন করেছে। উল্লেখ্য, ছাত্রীদের ভর্তির সংখ্যা অধিকতর হয়েছে। ২০১৫ সালের সহস াব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যে প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ক্ষেত্রে সাফল্য ৯৯% এর অধিক অর্জিত হয়েছে। ১ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত এ বছর ২ কোটি ৩২ লাখ বই বিনামূল্যে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আগামী শিক্ষা বছরে তা বাড়িয়ে ২ কোটি ৭০ লাখ টেক্সট বুক বিতরণ করা হবে।

ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জাতিসংঘের পিস কিপিং-এ বাংলাদেশিদের প্রশংসা করেন। শিক্ষামন্ত্রী তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক প্রফেশনাল ও মেধাবী রয়েছেন যারা জাতিসংঘের অন্যসব দপ্তরেও পারদর্শিতার সঙ্গে সেবাদান করতে পারেন। সাক্ষাত্কালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং মিশনের ইকোনোমিক মিনিস্টার মো. নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সুত্র

NewImage

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে ২০১২

কূটনৈতিক রিপোর্টার: সবার জন্য টেকসই জ্বালানি-শীর্ষক জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত এবং ‘সাসটেইনেবল এনার্জি ফর অল’ ইনিশিয়েটিভের সিনিয়র উপদেষ্টা লুইস গোমেজ গতকাল সচিবালয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান। সাক্ষাৎকালে বান কি মুনের উদ্যোগ সম্পর্কে তার একটি লিখিত বার্তাও হস্তান্তর করা হয়। ওই বার্তায় পৃথিবীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তার এ উদ্যোগ বলে জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। সবার জন্য জ্বালানি নিশ্চিত করা, বিশ্বের জ্বালানি দক্ষতা দ্বিগুণ করা এবং চাহিদার অর্ধেক নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আহরণ করার জন্য তার এ উদ্যোগে রাষ্ট্রসমূহ আশাব্যঞ্জক সাড়া দেবে বলেও আশা করেন বান কি মুন। বিশেষ উদ্যোগে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করায় জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান পরিবেশমন্ত্রী। বিশ্বব্যাপী অপরিকল্পিত জ্বালানি ব্যবহারের কারণে পৃথিবী ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শিল্পোন্নত দেশসমূহে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে একদিকে যেমন শক্তির অপচয় হচ্ছে তেমনি উত্তপ্ত করছে সৌরমণ্ডলকে। এতে প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকি ত্বরান্বিত হচ্ছে। এর শিকার হচ্ছে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মোট  জ্বালানির ৭ থেকে ৮ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আহরণ করছে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এর হার আরও ১০-২০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য কাজ চলছে। আগামী দিনের সব উন্নয়নের চালিকাশক্তি হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের এ উদ্যোগে ১১৮টি দেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশাবাদী জাতিসংঘ মহাসচিব। নতুন প্রজন্মকে একটি বাসযোগ্য পৃথিবী উপহার দিতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ উদ্যোগ সহায়ক হবে বলেও আশা করেন তিনি।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানী চুক্তি

গ্যাযপ্রম রাশিয়ার বৃহত্তম জ্বালানী কোম্পানী

বাংলাদেশের কয়েকটি গ্যাস ক্ষেত্রে কূপ খননের লক্ষ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান গ্যাযপ্রম বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় প্রায় বিশ কোটি মার্কিন ডলারের এক চুক্তি সই করেছে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জ্বালানী কোম্পানী গ্যাযপ্রম এই প্রথম বাংলাদেশে জ্বালানী খাতে কাজ করার জন্য একটি চুক্তি করলো।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় জ্বালানী সংস্থা পেট্রোবাংলার তিনটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানী লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানী লিমিটেড এবং জ্বালানী অনুসন্ধান এবং উত্তোলনকারী সংস্থা বাপেক্সের সাথে এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করে গ্যাযপ্রম।

চুক্তির আওতায় গ্যাযপ্রম মোট ৬ টি গ্যাসক্ষেত্রে ১০ টি কূপ খনন করবে ।

বাংলাদেশের পক্ষে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং গ্যাযপ্রমের পক্ষে সংস্থাটির উপ-মহা ব্যবস্থাপক ইয়ুরি স্কক চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন।

নতুন সহযোগিতার শুরু

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর রুশ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন শুরু হলেও দীর্ঘদিন জ্বালানী ক্ষেত্রে রাশিয়ার সাথে কোন চুক্তি ছিল না।

রাশিয়ার সঙ্গে এটি সহযোগিতার শুরু এবং এটি দীর্ঘদিন ধরে চলবে

হোসেন মনসুর, চেয়ারম্যান, পেট্রোবাংলা

“শুধুমাত্র দশটি কূপ খনন করেই শেষ নয়। তারা এখানে তাদের জ্বালানী বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশিক্ষনের জন্য একটি ইনস্টিটিউট করবে। সেজন্যে কিছুদিনের মধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এটি সহযোগিতার শুরু এবং এটি দীর্ঘদিন ধরে চলবে।”

চুক্তি অনুযায়ী, কূপ খননের জন্য এলসি খোলার ২০ মাসের মধ্যে এর কাজ শেষ করা হবে।

গ্যাযপ্রমের সাথে এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, বাংলাদেশে গত প্রায় আড়াই বছরে তেরটি গ্যাসকূপ খনন করা হয়েছে এবং এখন আরো দশটি কূপ খনন করা হলে গ্যাসের উৎপাদন আরো অনেক বাড়বে বলে তারা আশা করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মি. স্কক ভবিষ্যতে বাংলাদেশে গ্যাযপ্রমের কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

মি. স্কক বলেন, “আমরা আশা করি, বাংলাদেশে পেট্রোবাংলার সাথে গ্যাস কূপ খননের এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র একটি শুরু। বাংলাদেশের জ্বালানী পেট্রোবাংলা সাথে এই অংশীদারিত্ব থেকে আমরা সিসমিক সার্ভে এবং স্থলে ও সমুদ্রে কূপ খননসহ পূর্নমাত্রায় জ্বালানী অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কাজ করার জন্য প্রস্তুত। এটি শুধু বাংলাদেশের হাইড্রোকার্বন উৎপাদনই বাড়াবে না, এটি বাংলাদেশের জ্বালানী নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে।”

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মি. মনসুর বলেন, গ্যাযপ্রমের সাথে এই চুক্তিটি একটি বাণিজ্যিক চুক্তি এবং এর আওতায় তারা এখন শুধুমাত্র নির্ধারিত এই দশটি কূপই খনন করবে। কূপের সম্পূর্ন মালিকানা বাংলাদেশের থাকবে।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা দাবী করেন, গ্যাযপ্রমের সাথে এই চুক্তির ফলে দশটি কূপ খননের গড় ব্যয় এর আগে অন্যান্য বিদেশী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কূপ খননের ব্যয়ের চেয়ে কম হবে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

বাংলাদেশি পোশাকের নতুন সম্ভাবনার দ্বার মালয়েশিয়া

NewImage


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শিল্পের নতুন বাজার হিসেবে দেখা হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশি পণ্য ও সেবার মেলা ‘শোকেজ বাংলাদেশ-২০১২’ আয়োজন সম্পর্কিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বক্তারা বলেন, সে দেশের সরকার ইতিমধ্যে তৈরি পোশাকসহ ৩০০টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মালয়েশিয়ায় বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক রফতানি করা যাবে। এ ছাড়া হোম টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য, হস্তশিল্প, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, হারবাল পণ্য, রাবার, প্লাস্টিক, সিরামিক, টেবিল ওয়্যার, হালাল খাদ্য রফতানির সুযোগ রয়েছে। 
ডিসিসিআইয়ের সহায়তায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। ডিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট আসিফ ইব্রাহীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমসিসিআইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায়, এমসিসিআইর প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নূরুল ইসলাম, মহাসচিব আলমগীর জলিল, মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নূরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। 
আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বাংলাদেশের শিল্প খাতে বিদ্যমান সম্ভাবনা তুলে ধরে বলেন, দেশের ইমেজ ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য মালয়েশিয়ায় এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের আবহমানকালের কৃষ্টি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও শিল্প উদ্যোগ তুলে ধরা হবে। এ মেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে সুসংহত পর্যটন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষিভিত্তিক শিল্প খাত গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। অতীতে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে নীতির পরিবর্তন হওয়ায় শিল্পায়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও শিল্পনীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় এ মেলা আয়োজনের মাধ্যমে সে দেশে বাংলাদেশি পণ্যের ভোক্তা শ্রেণী তৈরি হবে। ফলে মালয়েশিয়ার উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের উৎসাহ পাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে উদীয়মান শিল্প খাতে মালয়েশিয়ার উন্নত প্রযুক্তি স্থানান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 
বক্তারা বলেন, বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর সুযোগ করে দিলে মালয়েশিয়া থেকে বছরে দেড় বিলিয়ন ইউএস ডলার বাংলাদেশে আসবে। মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রায় ৫ লাখ বৈধ বাংলাদেশি শ্রম শক্তির জন্য দেশে সহজে রেমিটেন্স পাঠাতে আসন্ন শোকেজ বাংলাদেশ-২০১২ তে ব্যাংক ও রেমিটেন্স সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগ অবারিত করা হবে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

বাংলার মেয়ের এভারেস্ট জয়

 

রবিবার, ২০ মে ২০১২, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯
বাংলার মেয়ের এভারেস্ট জয়
০ নিশাত মজুমদারের সাফল্যে উদ্বেল সারাদেশ
০ প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেত্রীর অভিনন্দন
শাহীন রহমান ॥ এবার এভারেস্ট বিজয়ী খাতায় প্রথমবারের মতো নাম লেখালেন বাংলাদেশের নারী নিশাত মজুমদার। শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় অপর সঙ্গী এমএ মুহিতের সঙ্গে সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণ করেন। তারা দু’জনই বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবের সদস্য হিসেবে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে এভারেস্ট অভিযান শুরু করেন। এ ক্লাবের সদস্য এমএ মুহিতই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন। গত বছর ২৫ মে মুহিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্টের চূড়া জয় করেন। বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাব নিশাত মজুমদার ও এমএ মুহিতের এভারেস্ট বিজয়ের খবর নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুসা ইব্রাহিম প্রথমবারের মতো এভারেস্ট জয়ের স্বাদ এনে দেন। ২০১০ সালের ২৩ মে তিনি সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণ করেন। নিশাত মজুমদার ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের কোন নারীর প্রথম এভারেস্ট বিজয়ের খবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎক্ষণিতভাবে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এছাড়া সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াও নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয়ের খবরের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রথম নারী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার ঢাকা ওয়াসার হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তার বাবা আব্দুল মান্নান মজুমদার একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচিত সম্পাদকম-লীর সদস্য। নিশাত মজুমদার যেমন এভারেস্ট বিজয়ী প্রথম নারী তেমনি এমএ মুহিত প্রথম ব্যক্তি যিনি এভারেস্টে উভয় চূড়া দিয়ে পর্বত আরোহণ করেছেন। জানা গেছে, গত বছর তিনি তিব্বতের দিক দিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় উঠলেও এভার তিনি নেপালের দিক দিয়ে এভারেস্ট বিজয় করেছেন। নিশাত মজুমদার ও এমএ মুহিতের এবারের পর্বতারোহে সঙ্গে ছিলেন নেপালের তিনজন শেরপা। গ্রীনিজ বিজয়ী শেরপা নেপাল থেকে জানিয়েছেন তার ভাই ক্যাম্প টু থেকে নিশাত ও মুহিতের এভারেস্ট বিজয়ের খবর তাকে নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এনামুল হকও পেম্বা দর্জির মাধ্যমে ক্লাবের সদস্য দুজনের এভারেস্ট বিজয়ের খবর পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। জানা গেছে, শুক্রবারের আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে তাদের এ অভিযান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সব অনিশ্চয়তার আঁধার কাটিয়ে শনিবার সকালেই তাদের এভারেস্ট বিজয়ের খবর পাওয়া যায়।
এদিকে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মেয়ে নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয়ের খবরে খুব খুশি তার বাবা আব্দুল মান্নান মজুমদার। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর গর্বে বিষয় কিছু হতে পারে না। তা মাও এ খবরে আনন্দে আত্মহারা। তিনি বলেন, এ খবরে তার খুব আনন্দ লাগছে। তবে মেয়ে দেশে না ফেরা পর্যন্ত শান্তি লাগছে না। বাংলা মাউন্টেয়ারিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নিশাত মজুমদারের পর্বতারোহের কৃতিত্ব বাংলাদেশের সব পর্বতারোহীকে গর্বিত করেছে। এখন বাংলাদেশের অনেক কিছুই ঘটছে যা আগে নারীদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। তার এভারেস্ট বিজয় মহিলাদের এবং নারী উন্নয়ন উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্দীপনার বিষয়।
এছাড়া এভারেস্ট অভিযানে থাকা বাংলাদেশের অপর এক নারী দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে অভিযান থেকে ছিটকে পড়েছেন। জানা গেছে ওয়াসফিয়া নাজরীন তাঁর সহযোগী শেরপারা ক্যাম্প থ্রিতে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। গত শুক্রবার সকালে ভয়াবহ তুষার ধসে ওয়াসফিয়ার তাঁবু ল-ভ- হয়ে যায়। এতে তাঁর সহযোগী দুই শেরপা আহত হয়েছেন এবং একজন নিখোঁজ। এ কারণে ওয়াসফিয়ার সামিট পুশ (চূড়ার দিকে যাত্রা) বিলম্বিত হয়েছে।
বাংলাদেশের কোন নারী হিসেবে নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয়ের খবরে অনেককেই আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অনেক সংগঠনে পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। তারা বলেন, প্রথম কোন নারী হিসেবে নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয় জাতির জন্য বিরাট সম্মান বয়ে এনেছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর অভিনন্দন বার্তায় বলেন, নিশাত মজুমদারের সাহসিকতায় দেশবাসী গর্বিত। প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে নিশাত বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করায় দেশবাসীর সঙ্গে আমিও গর্বিত। প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে এ প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে নিশাত মজুমদার বাঙালীর সাহসিকতা পরিচয় দিয়েছেন। তার এ সাফল্য আগামী প্রজন্ম অনপ্রাণিত হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ এভারেস্ট বিজয়ে বাংলাদেশের প্রথম বিজয়ী মহিলা নিশাত মজুমদারকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেন এ গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মুুখ উজ্জ্বল হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বাংলাদেশী নিশাত মজুমদারের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে বলেন, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশী অন্য নারীরা তার এ সাফল্য অনুকরণের মাধ্যমে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অনুপ্রাণিত হবে। তিনি বলেন, এক মহিলা হয়েও এভারেস্ট বিজয় সারাবিশ্বে স্বজাতির মাথাকে উন্নত করেছে। সারাদেশের জনগণ নিশাত মজুমদারের এই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে। আমিও তাদের আনন্দে নিজেকে শামিল করছি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও এভারেস্ট বিজয়ী হওয়া ঘটনায় নিশাত মজুমদারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শনিবার এক বার্তায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের মেয়েরা আজ রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক কর্মকা- বিচারাঙ্গন, ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানাবিধ অঙ্গনে তাদের পদার্পণ সাফল্যের সঙ্গে অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে আগেই উত্তোলিত হয়েছে। এবার সেই পতাকাটি এক মহিলার উদ্যোগে উড়বে এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। এদিকে নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহিম। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রথম বাংলাদেশী মেয়ে হিসেবে এভারেস্ট বিজয় একটা আনন্দের বিষয়। এতে প্রমাণ হয়েছে মেয়েদের অসাধ্য কিছু নেই। এত বড় বিষয় এ কারণে ছেলেরা এবং মেয়েরা চাইলে সমানতালে লড়তে পারে। চ্যালেঞ্জ তা যত বড় হোক না কেন সব জাগাতে মেয়েরা সমানভারে পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম। 
নিশাত মজুমদার প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করায় আরও অভিনন্দন জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন ( অব) এতি তাজুল ইসলাম এমপি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ( অব) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানউদ্দিন আহমেদ রাজা, মহাসচিব ( প্রশাসন) এমদাদ হোসেন মতিন, মহাসচিব (অর্থ) মনোয়ারুল হক খান লাবলু, মহাসচিব (অর্থ) মনিরুল হক, যুগ্ম মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীর প্রতীকসহ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
তবে নিশাত মজুমদার মেয়ে হিসেবে এভারেস্ট বিজয় করলেও এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টে পৌঁছানোটা খুব সহজ ছিল। তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে বন্ধুর পথ, মোকাবেলা করতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতা। ছোটবেলা থেকে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় নিশাত। নিশাতের জন্ম লক্ষ্মীপুরে। দুই বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। রাজধানীর বটমুলী হোম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা সিটি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কিছু দিন কাজ করেছেন। সেখান থেকেই ইনাম আল হকের সঙ্গে পরিচয়। তারপর বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবে (বিএমটিসি) যোগদান।
হিমালয় পর্বতকে জয় করতে হবেই এ উপলব্ধি থেকে বিএমটিসি হিমালয়ে অভিযানের জন্য প্রথম মহিলা দল পাঠায়। সেটি ২০০৬ সালের সেপ্টেম্ব^রের কথা। সেই দল প্রথম এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। পাঁচজনের সেই দলের কনিষ্ঠতম সদস্য ছিলেন নিশাত মজুমদার। এরপর দেশের প্রথম নারী পর্বতারোহী সাদিয়া সুলতানার নেতৃত্বে ২০০৬ সালের নারী দিবসে কেওক্রাডাং ট্রেকিংয়ে অংশ নেন নিশাত।
২০০৮ সালের ৪ জুন নেপালে হিমালয় পর্বতমালার অন্নপূর্ণা হিমালে সিঙ্গাচুলি পর্বতে ওঠেন নিশাত। যার উচ্চতা ২১ হাজার ৩২৮ ফুট (ছয় হাজার ৫০১ মিটার)। ওই অভিযানে সিঙ্গাচুলি অভিযানের পুরো দলের নেতৃত্ব দেন নিশাত মজুমদার। ১৯৭৫ সালের ১৬ মে জাপানের জুনকো তাবেই বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ এ পর্বত জয় করেন স্টেসি অ্যালিসন ১৯৮৮ সালে।

 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

৫ম বারের মতো বোরোর বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে শঙ্কিত কৃষক

 

২৯ এপ্রিল ২০১২

কাওসার রহমান ॥ টানা পঞ্চমবারের মতো দেশে বোরোর বাম্পার ফলনের রেকর্ড সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় চলতি বছরও দেশে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এ বাম্পার ফলনের পর কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ধানের মূল্য নিয়ে। বোরো ধান কাটা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নতুন ধানের বাজারে ধস নামার। ইতোমধ্যে নতুন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ধানের দাম আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ফলে কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। অথচ সার, বিদ্যুত, ডিজেল ও কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ বছর বোরো উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকার ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসছে না। বরং বিপুল মজুদ নিয়ে সরকারও এবার বোরো ধান-চাল ক্রয়ের ব্যাপারে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। গত দুই বছর আগে ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করা হলেও এবার এখন পর্যন্ত বোরো ধান- চাল সংগ্রহের মূল্য ঘোষণা করা হয়নি। ফলে নতুন ধানের বাজার নৈরাশ্যজনক অবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। এ সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা নতুন ধানের বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারাই এখন বোরো ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ অবস্থায় সরকার ধানের বাজারে হস্তক্ষেন না করলে কৃষক ধান আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সারাদেশে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। দেশের হাওড় অঞ্চলে এখন পুরোদমে ধান কাটা চলছে। অন্যান্য অঞ্চলেও আগাম বোরো ধান কাটা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ৩০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। কৃষক নগদ টাকার জন্য বাজারে নতুন ধান নিয়ে গিয়ে বিপাকে পড়ছে। নতুন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ধানের বাজারও পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ভিজা ধান প্রতিমণ ৪৫০ থেকে ৫শ’ টাকায় নেমে এসেছে। হাওড় অঞ্চলে নতুন ভিজা ধানের দাম ৪শ’ টাকায় চলে এসেছে। ফলে কৃষকের মধ্যে দারুণ হাতাশা দেখা দিয়েছে।

এবার নিয়ে টানা পাঁচ বছর দেশে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, বড় ধরনের কোন প্রাকৃতি দুর্যোগ না হওয়ায় এ বছর বোরোর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ধানের যে ফলন দেখা যাচ্ছে তাতে বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত ধানের ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এতে এ বছর বোরোর উৎপাদন এক কোটি ৯০ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 
জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের দক্ষতার কারণে গত পাঁচ বছর ধরেই দেশে বোরোর বাম্পার ফলন সম্ভব হয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে বোরোর এ বাম্পার ফলন শুরু হয়েছে। ওই বছর চাল আকারে বোরোর উৎপাদন আগের বছরের এক কোটি ৫০ লাখ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এক কোটি ৭৭ লাখ ৬২ হাজার টনে দাঁড়ায়। পরের বছর ২০০৮-০৯ সালে বোরো উৎপাদন হয় এক কোটি ৭৮ লাখ নয় হাজার টন। পরবর্তীতে নন-ইউরিয়া সারের মূল্য হ্রাস করার কারণে কৃষক তার জমিতে সুষম সার প্রয়োগের সুযোগ পায়। সেই সঙ্গে অন্যতম কৃষি উপকরণ সার কৃষকের দোরগোড়ায় চলে যাওয়ায় বোরো উৎপাদনে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে ২০০৯-১০ সালে বোরো উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় এক কোটি ৮৩ লাখ ৪১ হাজার টন। পরের বছর ২০১০-১১ সালে বোরো উৎপাদন আরও বেড়ে এক কোটি ৮৭ লাখ টন হয়। ধারাবাহিকভাবে টানা পাঁচ বছর বোরোর এ বাম্পার ফলন দেশে কৃষি খাতের ইতিহাসে একটি অনন্য রেকর্ড, যার কৃতিত্ব এ দেশের কৃষকদের। 
কিন্তু এ বাম্পার ফলন নিয়েও কৃষক খুশি হতে পারছে না। বাজারে ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় নতুন ধান নিয়ে কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ইউরিয়া সার, ডিজেল, বিদ্যুত ও কৃষি মজুরের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর বোরো উৎপাদনের খরচ কমপক্ষে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর যেখানে এক কেজি ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৫ টাকা ৪৭ পয়সা, এ বছর সেখানে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ১৩ পয়সা। 
গত বছর নতুন ধান ওঠার পর ধানের দাম যেখানে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকার মধ্যে ছিল। এ বছর তা ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ১৭-১৮ টাকা উৎপাদন খরচের বিপরীতে কৃষক এবার ধানের দাম পাচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা। নগদ টাকার সঙ্কটের কারণে এ দামেই কৃষকরা বাধ্য হচ্ছেন ফড়িয়াদের কাছে ধান বেচতে। 
নতুন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ধানের দাম কমে যাওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে বোরো ধান কাটা পুরোদমে শুরু হলে এ দাম আরও কমে যাবে। ফলে কৃষক তার ধান নিয়ে বিপাকে পড়বে। বিশেষ করে সবচেয়ে বিপদে পড়বে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা। কারণ নগদ টাকার সঙ্কটের কারণে তাদেরই নতুন ধান নিয়ে এখন বাজারে দৌড়াতে হচ্ছে। 
নতুন ধানের বাজারে এ নৈরাশ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি হলেও সরকার এখন পর্যন্ত ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করেনি। বিপুল পরিমাণ মজুদের কারণে সরকার এবার ধান-চাল সংগ্রহে ধীরগতিতে এগুচ্ছে, যা বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে সরকারের কাছে প্রায় ১৩ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে ১১ লাখ টনই চাল। এ মজুদ নিয়ে সরকার এবার কতটা ধান-চাল কিনতে পারবে সেটা নিয়েও সরকার চিন্তায় আছে। কারণ সরকারী খাদ্য গুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন। 
এ অবস্থায় খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক একটি চ্যানেলকে জানিয়েছেন, এ বছর দেশে প্রায় দুই কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দশ লাখ টন চাল কিনে কতটা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কৃষক এবার বোরো ধানের ভাল দাম পাবে কিনা এ নিয়ে সরকারও উদ্বিগ্ন। কারণ সরকার চাইলেও বোরো ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তবে এ বিষয়ে সরকার কি করতে পারে তা নির্ধারণে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হবে। 
তিনি বলেন, ‘সরকার ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতোমধ্যে দেশে চাল আমদানি বন্ধের চিন্তাভাবনা করছে। সেই সঙ্গে সরু চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রেকর্ড

NewImage

সুত্র

৮০ দিনে প্রতি হেক্টর উৎপাদন ১০ টন

নজমূল হক সরকার : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর এ কৃতিত্ব মুক্তাগাছা কাশিমপুর বিএডিসি’র খামারের। প্রতি হেক্টরে ১০ টন ধান উৎপাদনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বছরে ৪ বার এমন ধান উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে কৃষি গবেষণায় নিয়োজিত বিজ্ঞানীরা জানান। বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. এস এম নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশকে খাদ্যে আÍনির্ভরশীল হতে হলে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ধান চাষের বিকল্প নেই। সারাদেশে এ ধরনের ধান উৎপাদনের কৃষকদের উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ধান উৎপাদনে খরচ কম হবে। কৃষকরাও অধিক মুনাফা পাবে।চলতি বছরের গত ২০ ফেব্র“য়ারিতে সর্বাধুনিক প্রক্রিয়ায় অটোমেটেড নার্সারিতে উৎপাদিত চারা রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে রোপণ করা হয়। চারা রোপণের মাত্র ৮০ দিনে এই ধান কর্তন করা হয়। এ বিষয়ে বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. এস এম নাজমুল ইসলাম বলেন, এই সর্বোচ্চ রেকর্ড উৎপাদনের মূল ভূমিকা পালন করেন গোল্ডেন ব্রান ইঙ্ক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহদাব আকবর। আলাপকালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহদাব আকবর বলেন, এই আধুনিক প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ ও নুতন বিভিন্ন জাতের ধান প্রাšি-ক কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়াই তার জীবনের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন- সরকার, এনজিও, ফাও- এর সমন্বিত সহযোগিতা পেলে মাত্র ৩ বছরের মধ্যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বা¯-বায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণকরণ ও অন্যতম খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। তিনি বলেন, এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে গ্রাম পর্যায়ে যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্ত বলায় গড়ে তোলা হবে। উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত ধান সরাসরি বাজারজাত করার মাধ্যমে ধানের সর্বোচ্চ মূল্য নিশ্চিত করার মহাপরিকল্পনা নিয়ে শাহদাব আকবর কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত ও আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কোনও বিকল্প নেই।

 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »

বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে

NewImage

সুত্র

ড. আহমদ আল-কবির
বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা ‘মিরাকল’ (গরৎধপষব)। উন্নয়নের সূচকগুলো বিবেচনায় নিলে বিশেষ করে আর্থসামাজিক অবস্থার বিচার-বিশ্লেষণ করলে এমন প্রতীতি জন্মাবে যে বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ। সাধারণভাবে পাঠ্যবইয়ে অর্থনীতির যেসব তাত্তি্বক বিষয় পড়ানো হয়, তা বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি ও প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মেলানো কঠিন। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘দারিদ্র্য বিমোচনকে’ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াই চালিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বর্তমান দরিদ্রের হার ২৮ শতাংশ যা ২০০৬ সালে (গত বিএনপি সরকারের শেষ বছর) ছিল ৪০ শতাংশের উপরে। কৃষি, শিক্ষা, মা ও শিশুমৃত্যু, তথ্যপ্রযুক্তি ও বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ অন্যান্য সামাজিক খাতে যুগান্তকারী উন্নয়নের পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও মাথাপিছু আয়সহ অর্থনীতির অনেক সূচকে ব্যাপক উন্নতি আমাদের প্রবৃদ্ধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। গত তিন বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ শতাংশেরও অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ও ২০১১-১২ সালে ৬.৭ শতাংশ অতিক্রম করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ হার গড়ে ৩.২ শতাংশ এবং ১৯৯০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত গড়ে ৪.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হচ্ছিল। বাংলাদেশের এউচ প্রবৃদ্ধির হার পাকিস্তান, নেপালসহ এ২০-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো (আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান ইত্যাদি) থেকে ও ২০১১ সালে ভালো অবস্থানে (২৪তম) আছে। 
২০১৫ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে ১৬টি দেশ সাফল্য দেখাতে পেরেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, নারী উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা ও কৃষি উন্নয়ন বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে বলে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে স্পষ্ট করেই বলেছেন। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে উত্তরোত্তর সাফল্য অনেক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞের কাছে আদর্শ হিসেবে কাজ করছে। জাতিসংঘের ৬৬টি শান্তি মিশনের মধ্যে ৪৫টি মিশনেই বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে এবং দুটি মহিলা শান্তিরক্ষী দল পাঠাতে সক্ষম হয়। বিশ্ব ফোরামে বাংলাদেশের সাফল্যের মধ্যে ২০১০ সালের গউএ অধিৎফ-৪, ২০১১ সালে ঝড়ঁঃয ঝড়ঁঃয ঘবংি অধিৎফ, এবং ২০১০ সালে বাংলাদেশের দুটি ঘএঙ কর্তৃক ঊহবৎমু ওহহড়াধঃরড়হ অধিৎফ লাভ করা অন্যতম। এছাড়াও বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ঈষরসধঃব ঈযধহমব, ঞবৎৎড়ৎরংড়স ও ঠরড়ষবধহপব-সহ সব আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
২০০৭-০৯ সালব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বিশ্ব অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ালেও ২০১১ সালে আবারও একটি বড় ধাক্কা ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশ এ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে হচ্ছে। মন্দা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে উন্নত ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলো বিপুল বাজেট ঘাটতি, উচ্চ সরকারি ঋণ (ঢ়ঁনষরপ ফবনঃ) মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের হার বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দেশের সার্বভৌম ঋণ (ংড়াবৎবরমহ ফবনঃ) সমস্যা প্রবৃদ্ধির গতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি উন্নত দেশের চলতি হিসাবে বিশাল আকারের ঘাটতি এবং জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশ ও কয়েকটি বিকাশমান অর্থনীতির চলতি হিসাবে বিশাল আকারে উদ্বৃত্ত বিশ্ব অর্থনীতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে। এ ভারসাম্যহীনতা কমিয়ে আনার ব্যর্থতা বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে অনেকটা নাজুক করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে নীতি নির্ধারণে সমন্বয়ের অভাবও বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার কার্যক্রমকে বিলম্বিত করছে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার শুরুতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এর বিরূপ প্রভাব না পড়লেও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক থেকে রপ্তানি ও আমদানি খাতে কিছুটা প্রভাব পড়ে যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মন্দা-পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেরও বৈদেশিক বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় এবং ২০১০-১১ অর্থবছরের রপ্তানি ও আমদানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২৩ বিলিয়ন ও ৩২ বিলিয়ন ডলার (যা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ১০.৫ বিলিয়ন ও ১৪.৭ বিলিয়ন ডলার)। ২০১১ সালের শেষ ছয় মাসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় আবারও বাংলাদেশে চাপ অনুভূত হচ্ছে এবং এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি ও সরকারি ঋণের বৃদ্ধি ঘটছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিশ্বমন্দার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে যথাযথ আগাম ধারণা অর্জন এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক উদ্যোগ ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের মতো নানাবিধ সহায়তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে মন্দার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। মন্দার প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যে আবাসন শিল্পে ধস নামা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশ হতে শ্রমশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কিছুটা হ্রাস পায়। তবে এ সময় রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকে এবং ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয় যথাক্রমে ২২.৪২ শতাংশ ও ১৩.৪০ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেলেও জানুয়ারি, ২০১১ সাল থেকে তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং তা ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১.৬৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে (২০০৫-০৬ বছরে এর পরিমাণ ছিল ৪.৮৭ বিলিয়ন ডলার)। কর্মসংস্থান বাড়ানো ও বেকারত্ব কমাতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪৬তম যা তার পাশের দেশ ভারত (১১১তম), আফগানিস্তান (১৮০তম), পাকিস্তান (১৫২তম) এবং নেপাল (১৯০তম) থেকে অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পঞ্চম জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা বজায় থাকা ও মন্দা-পরবর্তী বিশ্বব্যাপী পণ্য ও সেবার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দেশের রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্যে যেমন উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক ও রাজস্ব খাতে গৃহীত ব্যবস্থার পাশাপাশি মুদ্রা খাতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ধানের ভালো উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকায় আগামী মাসগুলোয় বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা যায়। রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস ও বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১০-১১ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত হ্রাস পেয়েছে। এ সময়ে বিনিময় হারের অবনতি ঘটেছে। তা সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সহনশীল পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১১ সালের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ৯.৫ বিলিয়ন ডলার। জানুয়ারি ২০১১ থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং অবকাঠামো খাতে সরকার যে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছে তার সফল বাস্তবায়ন অর্থনীতিতে অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করবে যা দেশকে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
উন্নত বিশ্বের তথ্য মাধ্যমে সাধারণত বাংলাদেশ সম্পর্কে ২০০৯ সালের আগে পর্যন্ত নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশিত হতো। এ খবরগুলো সুখকর ছিল না। বন্যা, খরা, অপুষ্টি, খাদ্যস্বল্পতা, আর্থিক সংকট ইত্যাদি বিষয় পশ্চিমা পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন তুলে ধরতে সচেষ্ট ছিল। অথচ এ দেশের যে গর্ব করার মতো অর্জন হয়েছে সে সম্পর্কে তারা নিশ্চুপ থাকতে পছন্দ করত। বাংলাদেশ মানেই হতাশা ও ব্যর্থতা, এটাই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে এতদিন প্রতিষ্ঠিত ছিল। বিশ্বমন্দা উত্তরণের সময়ে বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য, সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে নজরকাড়া অর্জন, পরিবার পরিকল্পনা, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে বৈপ্লবিক উন্নতি, শিক্ষা বিশেষ করে নারীশিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয়ে সংবাদ প্রায়ই বেরোচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু গড় আয় ২০০৬ সালে ৪৮৭ ডলার থেকে ২০১১ সালে ৮১৮ ডলারে পেঁৗছেছে_ তা বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নত করার লক্ষ্যে বড় অর্জন বলে আমরা মনে করি।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের কতিপয় মহলের চিন্তা ও প্রচারণা খুবই নেতিবাচক। বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক নেতা, গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবী দেশটাকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লেগে গেছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচক ঋণাত্মক, এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় নিঃশেষ হয়ে আসছে, পুঁজিবাজারের অচলাবস্থা শেষ হবে না, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলোর কাছে আমাদের ভাবমূর্তি উত্তরোত্তর সংকটের মধ্যে পড়েছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ থমকে আছে, সর্বোপরি সর্বত্র সুশাসনের অভাব দেখা দিয়েছে এবং মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে, এ মর্মে প্রচুর বক্তব্য আমরা দেখি ও শুনি। 
আমি এসব সম্মানিত বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক-পেশাজীবী (আমাদের দেশে রাজনীতিকেও অনেকে একটি অর্থকরী পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন) ও টক শো আয়োজকদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। মোটা দাগে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কখনো ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি এ দেশে দেখা যায়নি। স্বাধীনতার আগে ও পরে এদেশে মাত্র কয়েক বছর অর্থনীতির অবস্থা খারাপ ছিল এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের অর্থনীতি নাজুক থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। স্বাধীনতার পরপর এদেশে মাত্র কয়েকশ কোটি টাকার বাজেট ছিল। এখন তা লাখো কোটি অতিক্রম করেছে। এটা যে কোন মাপকাঠিতে খুব বড় একটি অর্জন এবং এটা নিয়ে বিজয়ের ৪০ বছরপূর্তিতে আমরা গর্ব করতে পারি।
বৈশ্বিক মন্দার অভিঘাত মোকাবিলায় যথেষ্ট দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৬৬ শতাংশে। কৃষি খাতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার পাশাপাশি শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ানো এবং সেবা খাতের সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি সার্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। এ সময়ে রাজস্ব আহরণের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সুষ্ঠু বাজেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজস্ব আহরণের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সুষ্ঠু বাজেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজস্ব খাতে শৃঙ্খলাও বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বিশ্বের যে কোন উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঈর্ষার বিষয়। মোট জাতীয় উপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০১১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ২৪তম ছিল (২০১০ সালে বাংলাদেশের এ অবস্থান ছিল ৫৫তম), এর অর্থ হলো বিশ্বে এখন ১৯১টি স্বাধীন দেশ রয়েছে, যাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে কম। বিগত ৩ বছরে বাংলাদেশ গড়ে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। এ বছর তা ৬.৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়। তারপরও কি আমরা বলব বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র?
আমদানি ও রপ্তানি খাতে ২০১০-১১ অর্থবছরে ব্যাপক বৃদ্ধি অনেক বিশ্লেষককে আশ্চর্যান্বিত করেছে। এ দুই ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ার শীর্ষ তিনের মধ্যে। পরিসংখ্যান দেখলে তা সহজেই বোঝা যায়। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা প্রথম। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা নতুন বাজারে প্রবেশ করছি। রপ্তানিতে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের গার্মেন্টস খাতের সঙ্গে রেমিট্যান্স ও ওষুধ খাত প্রতিযোগিতা করবে। এছাড়া মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে পারলে সে খাতটিরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানির বড় সুযোগ রয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে বাজার ধরতে পারলে রেমিট্যান্স কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব।
খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানি মূল্য বিশ্বের সর্বত্রই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এটি হ্রাস পাবে এমন সম্ভাবনা কম। সম্মানিত বৃদ্ধিজীবীদের আলোচনা শুনলে মনে হয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যর্থতার জন্যই দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের অবগতির জন্য বলছি যে, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় একই রকম। স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে দরিদ্রের হার কমছে এবং এ বছর তা ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে বাজার বিশ্লেষক ও রাজনীতিকরা তাদের নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী পুঁজিবাজারের ২০১১ সালের নিম্নমুখী প্রবণতা বিশ্লেষণ করলেও বর্তমানে সঠিক অবস্থা অনেকটা পরিষ্কার। আমি মনে করি পুঁজিবাজারে উত্থান ও পতন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার এবং বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক সরবরাহ বিবেচনায় নিয়ে ২০১০ সালে শেষের দিকে সূচকে ব্যাপক উত্থান ছিল অস্বাভাবিক। এ সময়ে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী তাদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে বাজার থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১ হাজার ৪৯১ জন পরিচালকের শতকরা দুই ভাগের কম শেয়ার তাদের নিজ কোম্পানিতে আছে। এছাড়াও ৩৮টি কোম্পানির স্পন্সর ও পরিচালকদের শতকরা ৩০ ভাগের কম শেয়ার তাদের মালিকানায় আছে। এসব কোম্পানি ও পরিচালকরাই তাদের শেয়ার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করেছিলেন এবং তারা (ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী) তাদের মূলধন হারিয়েছেন। সরকার এ ধরনের অব্যবস্থা রোধে ডি-মিউচুয়েলাইজেশন করার উদ্যোগসহ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করে এসইসিকে পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে এসব ব্যবস্থার বাস্তবায়নকে সবাই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। পুুঁজিবাজারকে তার নিজস্ব গতিতে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে তাদের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি নির্দেশনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
দেশে মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ ইত্যাদি নিয়ে অধুনা অনেক নেতিবাচক কথাবার্তা হচ্ছে। এ সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বগামী থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ আমাদের গার্মেন্টস খাতের সাফল্যের পথ ধরে এগিয়ে এসেছে ওষুধ শিল্প, চামড়া, পাদুকা শিল্প, সফটওয়্যার সামগ্রী ও প্রসাধনী শিল্প। এছাড়া মানবসম্পদের উন্নয়ন করে বিদেশের শ্রমবাজারে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মানবসম্পদ রপ্তানির মাধ্যমে শ্রমবাজারগুলো ধরে রাখতে পারলে রেমিট্যান্স আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করা যাবে যা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট অবস্থানে ইতিবাচক প্রতিঘাত ফেলবে। বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী সবার কর্মসংস্থানের জন্য যুবসমাজকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে প্রশিক্ষণ প্রদানে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করতে হবে। এ সুযোগ তৈরি করার জন্য সরকারকে সহায়ক হিসেবে কাজ করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সুস্পষ্ট নীতিমালা ও লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে। বর্তমান সরকারের ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়াই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একমাত্র রক্ষাকবচ। তাই সব অর্থনৈতিক কর্মকা-ে (যথা ট্যাক্স ও রেভিনিউ সংগ্রহ, ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি) বর্তমান সরকারের ঘোষিত ব্যবস্থাগুলো কৃতিত্বের দাবিদার।
পাশাপাশি তরুণ পেশাজীবীদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া জরুরি। তরুণ পেশাজীবীদের আমি সম্মান করি। উন্নতির জন্য দুটি বিষয় খুবই জরুরি। একটা হলো মানবসম্পদ উন্নয়ন, অন্যটি তরুণ পেশাজীবীদের গুরুত্ব প্রদান। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ লোকের বয়স ৪০ বছরের নিচে আর ৩৪ শতাংশ ১৪ বছরের নিচে। এ দুটি অবস্থা থেকে বোঝা যায়, তরুণদের কথার বা মতামতের প্রতিফলন যদি না করা হয়, তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন অথবা রাজনৈতিক উন্নয়ন কোনটিই অর্জন করা সম্ভব নয়।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য আমাদের অর্থনীতি পূর্ণমাত্রায় গতিশীল হতে পারছে না। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন। পর্যাপ্ত গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য। উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাও জরুরি। আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতা আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। 
আমলাতন্ত্রের দক্ষতার অভাবে প্রচুর অর্থব্যয় সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আশানুরূপভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে না। এমনকি বৈদেশিক সহায়তা যথাযথ ব্যবহারের অপারগতায় বিভিন্ন প্রকল্পের অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি ও অনেক অর্থ অব্যবহৃত থেকে ফেরত যাচ্ছে। এসব প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও সবসময় আমাদের অর্থনীতিকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের খামখেয়ালিপনা, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও অস্থিরতা, বিশ্ববাজারে তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি আমাদের অর্থনীতির ভিত নাড়িয়ে দেয়।
জাতি গঠনে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই তাদের যুক্তিনির্ভর, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ হওয়া জরুরি। সত্য গোপন করে বা আংশিক গোপন করে পূর্বাপর সূত্রহীন কোন তথ্য সাময়িক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করতে পারে, তবে এ থেকে দীর্ঘদিন ধরে কোন ফায়দা নেয়া যায় না। যদি তারা পক্ষপাতদুষ্ট হন এবং মহল বিশেষের ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির প্রতিভূ হিসেবে কাজ করেন তবে শেষ পর্যন্ত তারা জনসাধারণের আস্থা ও সমর্থন হারাবেন। দেশে মতপ্রকাশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে, তবে আমার মতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যুক্তিতর্কের ও উপাত্তের সাহায্যে মতামত প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়া উচিত অন্যথায় আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান »