সফল বাংলাদেশ

সফল বাংলাদেশ: সব সফলতার খবর আলোচনা হোক গর্বের সাথে

মধুপুরে তুলার নতুন জাত উদ্ভাবন ॥ গ্রীষ্মকালে চাষ

চালু করুন এপ্রিল 30, 2012

শীতকালীন তুলা চাষের কথা আমরা সবাই জানি। জুন-জুলাইয়ে জমিতে বীজ বপন করা হয়। আর জানুয়ারিতে সে জমি থেকে পাকা তুলা সংগ্রহ করা হয়। চিরাচরিত এ পদ্ধতিতে জমিতে বছরে মাত্র একবারই তুলা চাষ হয়। কিন্তু গ্রীষ্ককালীন তুলা চাষ? বিষয়টি একেবারেই নতুন। অত্যাধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি প্রবর্তণের সর্ব শেষ নমুনা। এ নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কৃতী গবেষকরা। এ সময়ে অধিক তুলা উৎপাদন করে চাষীরা যেমন লাভবান হবে, তেমনি দেশের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। 
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের খামার বাড়ি অফিস জানায়, সারা দেশে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টরে তুলা চাষ হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় ১৫ হাজার হেক্টর এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়, উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্রভূমি এবং বৃহত্তর যশোহর ও কুষ্টিয়ার উঁচু ভূমিতে ৩৫ হাজার হেক্টরে তুলার আবাদ হয়। এ থেকে উৎপাদন হয় বড় জোর ১ লাখ বেল। অথচ দেশে তুলার চাহিদা হলো প্রায় ৪০ লাখ বেল। অবশিষ্ট ৩৯ লাখ বেল তুলা বিদেশ থেকে আমাদানি করা হয়। শুধুমাত্র প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেই আমদানি করা হয় ২৫ থেকে ৩০ লাখ বেল। দেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় তুলা আমদানি প্রতিবছরই বাড়ছে। এ অবস্থায় কটন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড তুলার ঘাটতি মোকাবেলায় সারাবছর তুলা উৎপাদন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে একই জমিতে বছরে দু’বার তুলা চাষ করা যাবে। ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বছরে দু’বার তুলা চাষ করা হয়। তুলা চাষের প্রায় পুরোটাই জুড়ে রয়েছে হাইব্রিড। 
বাংলাদেশে তুলা চাষে গতানুগতিক পরিবর্তন আনার জন্য বোর্ড দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করে আসছিল। সম্প্রতি এ গবেষণায় সুফল মিলে। বোর্ড যশোর জেলার জগদীশপুর গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবন করে গ্রীষ্মকালীন জাত। উফসী এ জাতের নাম সিবি-১২। নিজস্ব ফার্মে পরীক্ষামূলক আবাদে সফলতা আসায় বোর্ড চাষী পর্যায়ে গ্রীষ্মকালীন তুলা নিয়ে এসেছে। এ জাতের উৎপাদন ক্ষমতা চীন থেকে আমদানি করা হাইব্রিড তুলার কাছাকাছি। বিঘাতে উৎপাদন ১০/১২ মণ। বোর্ড সুলভমূল্যে কৃষক পর্যায়ে এ বীজ সরবরাহ করছে। চীন থেকে আমদানি করা প্রতিকেজি হাইব্রিড বীজের দাম যেখানে দুই হাজার টাকা সেখানে বোর্ড উদ্ভাবিত সিবি-১২ জাতের দাম মাত্র ২২ টাকা কেজি। 
গ্রীষ্মকালীন তুলা চাষকে জনপ্রিয় করার জন্য বোর্ড ‘গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ নামে একটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। উদ্দেশ্য সারাবছর তুলা চাষ। এর আওতায় দেশের ১৮টি জোনের প্রতিটিতে ৫টি করে অংশীদারিত্ব গবেষণা পট স্থাপন করা হয়েছে। ময়মনসিংহ কটন জোন অফিস মধুপুর ইউনিটের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ধরাটি গ্রামের আবুল হোসেনের দুই বিঘা জমিতে তুলার গ্রীষ্মকালীন পট স্থাপন করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে চারা রোপণ হয়েছে। ইতোমধ্যে সবুজ চারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আগামী মে মাসে জমি থেকে পাকা তুলা সংগ্রহের আশা করছেন বোর্ড।
কটন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ঢাকা রিজিয়নের উপ-পরিচালক ফখরে আলম ইবনে তাবিব জানান, গ্রীষ্মকালীন তুলা চাষে সেচের প্রয়োজন পড়ে। এজন্য যান্ত্রিক সেচের সুবিধা রয়েছে এমন সব এলাকায় গ্রীষ্মকালীন তুলা চাষ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, গ্রীষ্মকালীন চাষের মাধ্যমে বাড়তি তুলা উৎপাদন এবং আমদানি নির্ভরতা কমানোই বোর্ডের মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি। তুলা চাষী আবুল হোসেন জানান, তিনি দেড় দশক ধরে জমিতে তুলা চাষ করেন। এবার অনেকটা কৌতূহলবশত বোর্ডের কথায় জমিতে গ্রীষ্মকালীন তুলা লগিয়েছেন। সেচ, সার ও পরিচর্যা বেশি লাগছে। উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে বলে মনে হচ্ছে। এবার তুলার দাম ছিল খুবই কম। অনেক চাষী উৎপাদন খরচও তুলতে পারেনি। এমতাবস্থায় তুলার সংগ্রহ মূল্য না বাড়ালে গ্রীষ্মকালীন তুলা চাষে কৃষকরা এগিয়ে আসবে কীনা সেটি দেখার বিষয়। 
এদিকে তুলা চাষকে জনপ্রিয় এবং জেলার মাঠ পর্যায়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা স্কুল প্রাঙ্গণে তুলা চাষী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কৃষিবিদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মতিয়ার রহমান। বক্তব্য রাখেন উপ-পরিচালক ড. ফরিদ উদ্দীন, প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আখরুজ্জামান, উপ-পরিচালক ফখরে ইবনে তাবিব এবং মধুপুর ইউনিট প্রধান মোফাজ্জল হোসেন।

সুত্র


মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

%d bloggers like this: