দেশীয় অর্থায়নে ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২৯৭১টি বাসস্থান নির্মাণ করছে সরকার। সারাদেশের ৪৮৪টি উপজেলায় এসব ভবন নির্মাণ করা হবে। ২২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা প্রাক্বলন ব্যয়ের প্রকল্পটি আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।এটি বাস্তবায়ন হলে আর্থ-সামাজিকভাবে চরম সংকটাপন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা যাবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে সবাইকে স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ’ নামের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে তিন বছর। যা চলতি বছরে শুরু হয়ে ২০১৫ সালের জুন মাসে শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।তথ্যানুসারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্মুন্নত রেখে আর্থ-সামাজিকভাবে চরম সংকটাপন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে দেশের ৬৪ জেলার ৪৮৪টি উপজেলায় ওই ভবনগুলো নির্মাণ করা হবে। যার প্রতিটির আয়তন হবে ৫০০ বর্গফুট। এ ছাড়া প্রকল্পের মধ্যে রয়েছেÑ এক হাজার জন মুক্তিযোদ্ধাকে আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ দেয়ার কর্মসূচি। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী অংশে সমাজের অনগ্রসর ও অবহেলিত মানুষের জন্য আবাসিক সুবিধা সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। তাই এ প্রকল্পটি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার নীতি ও কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি বাস্তবায়িত হলে পরিবেশের ওপর কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলেও উল্লেখ করা হয়।জানা গেছে, প্রকল্পটি প্রণয়নপূর্বক অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে গত বছরের ৭ ডিসেম্বরে এটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন (পিইপি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২ হাজার ৯৭১টি বাসভবন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া এক হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। বাসস্থান নির্মাণের মাধ্যমে অনগ্রসর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সমস্যা দূর হবে এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। তাই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। সূত্র জানায়, এটি বাস্তবায়নে বছরভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৯১ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭৮ কোটি ২৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৭ কোটি ৬০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মূল কার্যক্রম ও পটভূমি সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হওয়া সত্ত্বেও অনেক মুক্তিযোদ্ধার মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। এ ছাড়া অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে জরাজীর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কোন রকমে বসবাস করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাদের অনেক দুর্ভোগ উপেক্ষা করে কোন রকমে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এমনকি অনেকের পানীয় জলের সুব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত স্যানিটেশনেরও ব্যবস্থা নেই। তাদের এ করুণ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যেই এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে।ৃ
মন্তব্য করুন