ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতায় ফিরে আসছে দেশের পুঁজিবাজার। গত দেড় মাস ধরে বাজার ইতিবাচক। প্রায় প্রতিদিনই বাজারের সাধারণ সূচক বাড়ছে। বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপে বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।বাজারের এই আচরণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মনোযোগ এখন দেশের পুঁজিবাজারের দিকে। তারা এখন বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিরা দেশের পুঁজিবাজারে তাদের হাতে থাকা অলস অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছেন। বিডিনিউজ।ইউকে বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সৈয়দ বেলাল আহমেদ জানান, ‘মানুষ এখন আগ্রহী। বাজারে বেশ কিছু উত্সাহব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমি আশা করছি, একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা এবার পুঁজিবাজারে ঢুকবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা বুঝতে পারছেন, এখনই বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠ সময় এবং তারা ‘ভালো শেয়ার’ কম মূল্যে কিনতে চান। ‘যদিও গত কয়েক দিনে বাজার কিছু ভালো হয়েছে। কিন্তু এরপরও অনেক মৌলভিত্তিক শেয়ারের (ভালো শেয়ার) দাম এখনও বেশ নিচে। আগামীতে বাজার আরও ভালো হবে-এ প্রত্যাশায় প্রবাসীরা বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছেন’-যোগ করেন তিনি।সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন যুক্তরাজ্যের কারি লাইফ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে দেশের পুঁজিবাজারে প্রবাসীদের (এনআরবি) বিনিয়োগের আগ্রহের বিষয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ সূচক পড়তে পড়তে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর সূচক ৩ হাজার ৬১৬ পয়েন্টে নেমে এসেছিল। এরপর থেকে বাজার বাড়তে থাকে। গত আড়াই মাসে সেই সূচক ১ হাজার ৭৫০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৬৭ পয়েন্টে উঠেছে।একই সময়ে লেনদেন কমতে কমতে দু’শ’ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছিল। এখন হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে।এদিকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রেসিডেন্ট এম রকিবুর রহমান প্রবাসী বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, যে কোনো বিনিয়োগকারীর জন্য এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার উপযুক্ত সময়। আমরা প্রবাসীদের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। তারা এগিয়ে এলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব। আগামীতে বাজার আরও ভালো হবে বলেও আশাবাদী তিনি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান বেলাল আহমেদ। তিনি বলেন, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও স্পেনের মতো ইউরোপের দেশগুলোতে অনেক বাংলাদেশি বাস করছেন। তাদের অনেকে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন।পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে সরকারের সাম্প্রতিক নানা উদ্যোগ, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আইপিও’র ক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ কোটা এবং পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি আনতে সরকারের চেষ্টা-প্রবাসীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উত্সাহী করছে বলে জানান বেলাল আহমেদ। প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আরও আগ্রহী হন সেজন্য দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধানদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এই প্রবাসী বাঙালি। তিনি বলেন, তারা (ডিএসই ও সিএসই) প্রবাসীদের বিনিয়োগ চায়। কিন্তু দেশের বাইরে এজন্য তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই গতবারের মতো এবারও লন্ডনে তিন দিনব্যাপী পুঁজিবাজার মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন বেলাল আহমেদ।এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে যেসব খাত প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে, সেসব খাতকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। তাই এ ধরনের উদ্যোগকে আমি সমর্থন করি। তবে এ খাতকে যথাযথভাবে যেন তুলে ধরা হয় সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনাবাসী বাংলাদেশিরা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাই তাদের কাছে দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমি এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’লন্ডনে পুঁজিবাজার মেলাপ্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উত্সাহিত করতে আগামী ২৭ মে থেকে লন্ডনে তিনদিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হবে। যুক্তরাজ্যে কারি লাইফ ম্যাগাজিন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কারি লাইফ ইভেন্টস ওই মেলার আয়োজন করছে। লন্ডন মুসলিম সেন্টারে আয়োজিত এই মেলা শেষ হবে ২৯ মে।মেলার আয়োজক সৈয়দ বেলাল আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ফেয়ার-২০১২’ শিরোনামে দ্বিতীয়বারের মতো এই মেলার আয়োজন করবে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুফল নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশিদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের বাইরে এটিই সবচেয়ে বড় ধরনের পুঁজিবাজার মেলা। মেলা নিয়ে ভালো সাড়া মিলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মেলার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান এর মধ্যেই নিবন্ধন করেছে।’ বেলাল আহমেদ জানান, এপ্রিলে তাদের এ মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও আগ্রহী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তা মে মাসে আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়। অনলাইন ট্রেডিং সুবিধা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ডিএসই ও সিএসইর একদল নির্বাচিত স্টক ব্রোকারসকে মেলায় অংশগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।বেলাল আহমেদ বলেন, তিন দিনের এই মেলায় ১০ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তাদের অনেকেই বিও হিসাব খুলবেন। এই মেলা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস-বলেন তিনি।
মন্তব্য করুন